‘নতুন করে যে সংবিধান লেখা হবে, তাতে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করা হবে। উন্নয়ন হলো ফ্যাসিস্টদের শব্দ। উন্নয়নের কথা বলে তারা আমাদের গণতন্ত্র হরণ করেছে, পরিবেশ ধ্বংস করেছে। বর্তমান সরকার নদী হত্যাকারী ফ্যাসিস্টদেরও বিচার করবে।’
‘ফ্যাসিবাদের কবলে নদী’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। মঙ্গলবার বিকেলে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরা দেখি, হাওরের রাস্তায় আলপনা আঁকা হয়, পরে সেই রং গিয়ে পানিতে পড়ে। এতে অনেক মাছ মারা যায়। পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বিষয়ে কথা বলা লোকের সংখ্যা বর্তমান সমাজে একেবারেই কম। তাই নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে নতুন করে আইন করা যায় কি না, তা ভেবে দেখা হচ্ছে।’
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম ছিলেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি। তিনি বলেন, ‘আবরার ফাহাদ নদী নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ফ্যাসিস্টদের হাতে শহীদ হয়েছেন। নদী বাঁচাতে আবরার ফাহাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের পথ নির্দেশ করবে। ফ্যাসিবাদের কবলে পড়ে বিগত ১৬ বছরে নদীর যে বিপর্যস্ত অবস্থা, তার সমাধান কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে। নদী, কৃষি ও পরিবেশ নিয়ে জাতীয় নীতি গ্রহণ করা হবে।’
ফ্যাসিবাদের কবলে পড়ে বিগত ১৬ বছরে নদীর যে বিপর্যস্ত অবস্থা, তার সমাধান কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে। নদী, কৃষি ও পরিবেশ নিয়ে জাতীয় নীতি গ্রহণ করা হবে।মো. নাহিদ ইসলাম, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক। স্বাধীনতাসংগ্রামে আমাদের স্লোগান ছিল—“পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা”। ঢাকার চারপাশে চারটা নদী আছে। এসব নদীর কথা মাথায় রেখে নগর–পরিকল্পনা করতে পারলে তা জনবান্ধব হতো। বিভিন্ন মাফিয়ারা নদী দখল ও পরিবেশ ধ্বংস করে গোষ্ঠীস্বার্থ হাসিল করেছে। আমরা যাতে দখলদারদের প্রতিহত করতে পারি, সে জন্য রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি রূপরেখা প্রণয়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
নদী নিয়ে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) করা একটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে। নদী রক্ষায় কাজ করতে গিয়ে মামলা ও নির্যাতনের শিকার হওয়া সাংবাদিকেরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরডিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। তিনি বলেন, দেশের ৭৭টি নদীর ১৭৬টি স্থানে বালু তোলার সিন্ডিকেটে আওয়ামী লীগের ২৫৬ জন মাফিয়া জড়িত ছিল। প্রধান মাফিয়া ছিলেন সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি। সারা দেশে নদীঘাটগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হতো। ফ্যাসিস্টদের অনুসারীদের অনেকে এখনো চাঁদা তুলে যাচ্ছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে চাঁদাবাজেরা দল পরিবর্তন করেছে।’
পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো এখানকার বসতি ও জীবিকার উৎস ছিল। নদীগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে একেক নদীর ধারে একেক ধরনের শিল্প গড়ে উঠেছে। যেমন টাঙ্গাইলে টাঙ্গাইল শাড়ি, নারায়ণগঞ্জে মসলিনসহ নানা শিল্প। এসব শিল্প ও জীবিকার উৎস ফ্যাসিবাদী শাসনামলে নদী ধ্বংসের কারণে আজ বিলুপ্তপ্রায়।