ঢাকায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেশি, কম সিলেটে

এবার ঈদের আগে–পরে মিলে ১৫ দিনে সড়ক, নৌ ও রেলপথে দুর্ঘটনায় ৩৬৮ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। একক জেলা হিসেবে টাঙ্গাইল জেলায় সবচেয়ে বেশি ১৯টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন।

এবারের ঈদযাত্রার ১৫ দিনে দেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে দুর্ঘটনায় ৩৬৮ জন নিহত হয়েছেন। সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বেশি। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে সিলেট বিভাগে।

বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। সংগঠনটি দেশের ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

রোড সেফটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার ঈদুল আজহার সময়ে ২৩ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত দেশে ৩০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৪ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬৩১ জন। যার মধ্যে নারী ৬১ এবং শিশু ৭২ জন।

একই সময়ে ১৪টি নৌ দুর্ঘটনায় ২১ জন এবং রেলপথে ২৭টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত হয়েছেন।

ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৩২ দশমিক ৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। এরপরে আছে থ্রি–হুইলার যাত্রী ও পথচারী।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সম্পর্কে সংগঠনটি বলেছে, অন্য যানবাহনের ধাক্কা বা চাপায় দুর্ঘটনা ঘটেছে সাড়ে ৩৯ শতাংশ। মোটরসাইকেলে নিহত ব্যক্তিদের ৫২ দশমিক ৮৩ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর।

ভাঙ্গায় আগুনে পুড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স থেকে সাতজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৪ জুন ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে এ দুর্ঘটনা ঘটে

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, দুর্ঘটনার ৪৩ দশমিক ২৩ শতাংশ ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে। অন্যদিকে আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনার হার প্রায় ৩৮ শতাংশ। সংগঠনটির হিসাবে, দুর্ঘটনার ৪৯ শতাংশের বেশি ঘটেছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানের মধ্যে মোটরসাইকেল ১২২টি, থ্রি-হুইলার ১১৮টি (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-ম্যাক্সি) এবং বাস ৯৭টি।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি (৩০.৬৯ শতাংশ)। দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দিক থেকে এগিয়ে ঢাকা (৩০.৫৫ শতাংশ)। ঢাকায় ৯৩টি দুর্ঘটনায় ৯৯ জন নিহত হয়েছেন।  সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে সিলেট বিভাগে (৩.৯৬ শতাংশ)। এতে প্রাণহানি ৪.৯৩ শতাংশ।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬.৮৩ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ১৩.২০ শতাংশ ও রাজশাহী বিভাগে ১২.২১ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

একক জেলা হিসেবে টাঙ্গাইল জেলায় সবচেয়ে বেশি ১৯টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ছিল মানিকগঞ্জ, নোয়াখালী, বান্দরবান, পিরোজপুর ও জামালপুর জেলায়। এই ৫টি জেলায় স্বল্প মাত্রার কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।

রোড সেফটি বলেছে, চলতি বছরের ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ২১ দশমিক ৬ জন নিহত হয়েছেন, যা গতবার ছিল ২৫ দশমিক ৯১ জন। গতবারের চেয়ে এবার প্রাণহানি কমার কারণ হিসেবে সংগঠনটি বলেছে, এবারের ঈদযাত্রায় মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেশি ছিল। পাশাপাশি সড়ক বিভাগ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রোড সেফটি বলেছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন,  বেপরোয়া গতি  ও মানসিকতা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহনে চাঁদাবাজি।

সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে কিছু সুপারিশও করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ, স্বল্পগতির যানের জন্য সার্ভিস রোড (পার্শ্বরাস্তা), উন্নত গণপরিবহন এবং সড়ক পরিবাহন আইন বাস্তবায়ন।

আরেক সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির দেওয়া প্রতিবেদনমতে, এবার ঈদযাত্রায় ২৭৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৯৯ জন। আর সড়ক, নৌ ও রেলপথে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মোট ৩৪০ জন।