বিএসএমএমইউর সেমিনার

সম্মানজনক হতে হবে মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা

  • সরকারি হিসাবে দেশে এক লাখ শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ১২৩ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতিদিন ১০ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে।

  • দেশে অস্ত্রোপচারে শিশুজন্ম উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। অন্যদিকে প্রসবপূর্ব সেবা আগের চেয়ে কমতে দেখা যাচ্ছে।

প্রতীকী ছবি

মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা সম্মানজনক হওয়া দরকার। শুধু চিকিৎসকেরা এই সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন না। দেশে মাতৃমৃত্যু কমাতে প্রসবপূর্ব সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি ধাত্রীর সংখ্যা বাড়াতে হবে।

তবে ফৌজদারি মামলার ভয় থাকলে চিকিৎসকেরা জরুরি সেবা দান থেকে বিরত থাকতে পারেন, এমন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেন্দ্রীয় সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এ কথা বলেন। নিয়মিত মাসিক এই সেমিনারের এবারের বিষয় ছিল ‘মাতৃত্বকালীন জটিলতা: কীভাবে কমানো সম্ভব?’ সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হলে তাঁরা জরুরি সেবা বা জরুরি অস্ত্রোপচার থেকে বিরত থাকবেন। এতে মানুষ চিকিৎসা পাবে না, অনেক রোগী দেশের বাইরে চলে যাবে।
মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, উপাচার্য, বিএসএমএমইউ

অনুষ্ঠানে বলা হয়, সরকারি হিসাবে দেশে এক লাখ শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ১২৩ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতিদিন ১০ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। দেশে অস্ত্রোপচারে শিশুজন্ম উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। অন্যদিকে প্রসবপূর্ব সেবা আগের চেয়ে কমতে দেখা যাচ্ছে।

মূল উপস্থাপনায় বিএসএমএমইউর স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শিউলী চৌধুরী বলেন, গর্ভবতী নারীদের চারবার প্রসবপূর্ব সেবা দরকার। চারবার সেবা পাওয়া গর্ভবতীর হার কমছে। ২০১৭–২০১৮ সালে ৪৬ শতাংশ গর্ভবতী এই সেবা পেতেন। ২০২২ সালে এই হার কমে ৪১ শতাংশে দাঁড়ায়।

মাতৃমৃত্যুর পেছনের কিছু কারণ উল্লেখ করার সময় শিউলী চৌধুরী বলেন, জরুরি প্রয়োজনের সময়েও তিনটি কারণে সেবা নিতে বিলম্ব হয়—সেবা নেওয়ার ব্যাপারে পরিবারের সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হয়, সেবাকেন্দ্রে পৌঁছাতে বিলম্ব হয় এবং সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও বিলম্ব হয়। মাতৃমৃত্যু কমাতে হলে ঠিক সময়ে ঠিক সেবা দিতে হবে। শুধু চিকিৎসকেরা মাতৃমৃত্যু কমাতে পারবেন না। হাসপাতালগুলোতে মিডওয়াইফের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বেগম নাসরীন বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলেই চিকিৎসকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে।

বিভাগের অধ্যাপক তৃপ্তি রানী দাশ বলেন, যেকোনো রোগী এলে তাঁর তথ্য লিপিবদ্ধকরণ (ডকুমেন্টেশন) যথাযথ হওয়া দরকার। কোনো কোনো প্রসবে ১২–১৪ ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে। অনেক চিকিৎসকের পক্ষে দীর্ঘ সময় বিলম্ব করা সম্ভব হয় না। ওই সময় মিডওয়াইফ দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কোন প্রসব স্বাভাবিক হবে আর কোনো প্রসবে অস্ত্রোপচার লাগবে, তার পরিষ্কার লক্ষণ থাকে। প্রসবের জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসাবিধি (প্রটোকল) আছে। লক্ষণ দেখে চিকিৎসাবিধি মানলে দেশে অস্ত্রোপচারে শিশুজন্ম কমবে। স্বাভাবিক প্রসব নিয়ে বা অন্য চিকিৎসা বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া ঠিক না। ব্যথাবিহীন প্রসবের যে কথা বলা হয়, তা–ও ঠিক না।

একাধিক আলোচক রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে মা ও নবজাতকের মৃত্যু এবং দুই চিকিৎসকের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। চিকিৎসকেরা কোনো অপরাধ করলে বা ত্রুটি করলে তার প্রতিকার চাওয়ার বা পাওয়ার স্থান হচ্ছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে আইন অনুায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হলে তাঁরা জরুরি সেবা বা জরুরি অস্ত্রোপচার থেকে বিরত থাকবেন। এতে মানুষ চিকিৎসা পাবে না, অনেক রোগী দেশের বাইরে চলে যাবে।

সেমিনারে প্রবন্ধে ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দা সাঈদা জটিল গর্ভাবস্থায় কী চিকিৎসা করানো যায় তা বর্ণনা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেমিনার সাব–কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী।