২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম (ওয়েবসাইট ও অ্যাপ) উদ্বোধনের আগেই আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি তৈরি শুরু।
কৃষকের পণ্য অনলাইনে বিক্রির বন্দোবস্ত করতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ‘সদাই’ নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। কৃষক এবং ভোক্তাদের জন্য আলাদা দুটি মোবাইল অ্যাপও তৈরি করেছে তারা। চলতি মাসে তা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার কথা।
কিন্তু ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি এসব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম (ওয়েবসাইট ও অ্যাপ) উদ্বোধনের আগেই আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে একই ধরনের প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। যদিও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ‘সদাই’ প্ল্যাটফর্মকেই আরও উন্নত ও কার্যকর করার কথা বলা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডিপিপির বাইরে কাজ করা হলে তা নিয়মের লঙ্ঘন।
এদিকে নতুন ওয়েবসাইট তৈরির কাজের দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘অনলাইনভিত্তিক কৃষি বিপণনব্যবস্থা উন্নয়ন কর্মসূচি’ শীর্ষক প্রকল্প ২০২০ সালের জুনে শুরু হয়। যার মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের জুনে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সদাই’ ওয়েবসাইট ও দুটি অ্যাপ বানানো হয়, যা ইতিমধ্যে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বুঝে পেয়েছে।
নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করা মানে সরকারি অর্থের অপচয়। আর ডিপিপিতে যা থাকবে, সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এটা না হলে তা নিয়মের লঙ্ঘন।ফারুক হোসেন, সাবেক মহাপরিচালক, সিপিটিইউ
সূত্র জানায়, কৃষক ও ভোক্তাদের সুবিধা নিশ্চিত করতে ডিপিপিতে সদাই ওয়েবসাইট ও অ্যাপকে আরও উন্নত এবং কার্যকর করার কথা বলা হয়েছিল। এ জন্য আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু তা না করে আবার ওয়েবসাইট ও অ্যাপ তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সদাই অ্যাপের মধ্যে কৃষক এবং ভোক্তাদের জন্য অনলাইনে লেনদেন ব্যবস্থা ‘পেমেন্ট গেটওয়ে’ ঠিক করা হয়েছে। উদ্যোক্তা এবং কৃষকদের তালিকা তৈরি হয়েছে। ৩৫টি জেলার এ ধরনের কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করেছিল। একই সঙ্গে ২৫ জেলার কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এত সব আয়োজনের পর একই ধরনের আরেকটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারি অর্থের অপচয় হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ ব্যাপারে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম প্রথম আলোকে বলেন, আগে তৈরি করা সদাই প্ল্যাটফর্ম অল্প টাকায় তৈরি হওয়ায় তা দুর্বল। নতুন প্ল্যাটফর্ম এমনভাবে তৈরি করা হবে, যাতে সেখান থেকে ৬ কোটি ভোক্তাকে সেবা দেওয়া যায়। যে কারণে বেশি অর্থ ব্যয় করা হবে। আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের সব কাজ এখন স্মার্ট পদ্ধতিতে হওয়ায় সদাই নামের জায়গায় ‘স্মার্ট কৃষি বাজার’ নাম রাখা হয়েছে। নতুন প্ল্যাটফর্মে সদাইয়ের তথ্যসহ সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
কাজের জন্য সক্ষমতা বিবেচনা করেই ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে। সব নিয়ম মেনে দরপত্রের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কমিটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজের জন্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করেছে।মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম
এদিকে নতুন ওই অ্যাপ ও ওয়েবসাইট তৈরির জন্য ‘মাই সফট হ্যাভেন (বিডি) লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়েছে।
দরপত্রের সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা অরেঞ্জ বিডি এবং সিমেক সিস্টেম লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, একটি সুনির্দিষ্ট কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করার পর নতুন করে শর্ত যুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম প্রথম আলোকে বলেন, কাজের জন্য সক্ষমতা বিবেচনা করেই ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে। সব নিয়ম মেনে দরপত্রের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কমিটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজের জন্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করেছে।
ডিপিপি লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে মাসুদ করিম বলেন, আইনি দিক খতিয়ে দেখেই নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা করা হয়েছে, তাতে ডিপিপি লঙ্ঘন করা হয়নি।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সদাই (sadai.gov.bd) ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায়, সেখানে ‘কৃষকের বাজার’, ‘পাইকারি বাজার’, ‘খুচরা বাজার’ ও নারীদের জন্য বিশেষায়িত ‘নারী কর্নার’ নামে আলাদা বাজার রাখা হয়েছে। এসব বাজারে বিভিন্ন কৃষিপণ্য কেনাবেচার নানা অপশন রয়েছে। কৃষি সাফল্যের কিছু প্রামাণ্যচিত্র রয়েছে ওয়েবসাইটে। আর গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে ‘সদাই’ ও ‘সদাই উদ্যোক্তা’ নামে দুটি অ্যাপ পাওয়া যায়।
এসব ওয়েবসাইট ও অ্যাপ রেখে নতুন করে ওয়েবসাইট ও অ্যাপ তৈরিকে সরকারি অর্থের অপচয় বলে মন্তব্য করেন সরকারি কেনাকাটাসংক্রান্ত সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) সাবেক মহাপরিচালক ফারুক হোসেন। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে ওয়েবসাইট ও অ্যাপ তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে নিয়মিতভাবে তা হালনাগাদ করা। নতুন করে আরেকটি ওয়েবসাইট তৈরি করা মানে সরকারি অর্থের অপচয়। আর ডিপিপিতে যা থাকবে, সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এটা না হলে তা নিয়মের লঙ্ঘন।