ঢাবি প্রশাসনের যৌথসভা

আলোচনায় নেই ছাত্রলীগের কক্ষ দখল, শিক্ষার্থী-নির্যাতন ইস্যু

হলের প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে যৌথসভা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলের পানি, খাবারের গুণগত মান ও শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিংয়ে (মানসিক স্বাস্থ্যসেবা) বেশি গুরুত্ব দিতে চায়। তবে আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এই সভায় হলগুলোয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কক্ষ দখল-নিয়ন্ত্রণ ও গেস্টরুমে শিক্ষার্থী নির্যাতন নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এই সভা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্য সভাটি করেন।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলের ছাত্রলীগের নেত্রীরা হলের নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেন। এ ছাড়া ছাত্রীদের আরেকটি অংশ মানববন্ধন করে হলে খাবারের নিম্নমান, অব্যবস্থাপনাসহ নানা অভিযোগ করেন। এমন প্রেক্ষাপটে গতকালের সভাটি ডাকা হয়।

সভায় হলগুলোর নানা কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকেরা। তাঁদের বক্তব্যে হলে পানির ব্যবস্থা, সংস্কারকাজ, ম্যাগাজিন প্রকাশ, উন্নয়নমূলক নানা কর্মকাণ্ড, ক্যানটিনের ব্যবস্থাপনা, ইন্টারনেট সেবাসহ নানা বিষয়ের চিত্র উঠে আসে। তবে কারও আলোচনায় হলগুলোয় ছাত্রলীগের কক্ষ দখল-নিয়ন্ত্রণ, গণরুম-গেস্টরুমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, জোর করে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যবহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উঠে আসেনি। সভায় অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষক প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

সভায় উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, তাঁরা হলের পানি, খাবারের গুণগত মান ও কাউন্সেলিংয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চান। যেহেতু সীমাবদ্ধতা অনেক, তাই প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকবে। সীমাবদ্ধতা নিয়েই কাজ করতে হবে। তাত্ত্বিকদের কথা শুনলে হবে না। বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে।

আখতারুজ্জামান আরও বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নানা খবর আসছে। খবর দেখে ভেবেছেন, তাঁরা ঝিমিয়ে পড়লেন কি না। মূলত সে কারণেই এই সভার আয়োজন। তাঁদের সময়ে (ছাত্রজীবনে) তাঁরা দেখতেন, হল প্রশাসনকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রায়ই সভা করত। তিন যুগ ধরে এমন কোনো সভা হয়নি। তাঁরা আবার শুরু করলেন। এখন থেকে নিয়মিত এমন সভার আয়োজন হবে।

হল প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, আবাসিক শিক্ষকেরা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্লকের শিক্ষার্থীদের কাছে যাবেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করবেন। এতে তাঁরা তাঁদের শ্রদ্ধার স্থান অর্জন করতে পারবেন। একজন শিক্ষক তখনই নৈতিকভাবে শক্তিশালী হন, যখন শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁর মিথস্ক্রিয়া হয়। এটি অনেক বড় জায়গা। এই সংযোগ তৈরি করতে পারলে শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে শুরু করবেন। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের কক্ষে চলে যাবেন। শিক্ষার্থীরাও খুশি হবেন। শিক্ষকও পরিস্থিতি জানতে পারবেন।