ভ্রমণ সব সময়ই রোমাঞ্চকর; কিন্তু মাঝেমধে৵ যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে ভ্রমণরত অবস্থায় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। যেমন ‘আগে থেকে টিকিট বুকিং দিলে এমন হতো না…’, ‘এই জিনিসটা কীভাবে ফেলে আসলাম…’, ‘অমুককে ভীষণ মিস করছি, একবার বললে মনে হয় চলে আসতো…’, ‘নাহ, একা এলেই নিজের মতো করে ঘুরে বেড়াতে পারতাম…’ ইত্যাদি। তাই ভ্রমণকে ঝামেলামুক্ত এবং আনন্দদায়ক করতে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি। হোক সেটি একা বা দলবদ্ধভাবে এবং উড়োজাহাজ-লঞ্চ-বাস-ট্রেন বা ব্যক্তিগত গাড়ি—যাত্রার মাধ্যম এবং সঙ্গ যা-ই বা যে-ই হোক না কেন, প্রস্তুতিতে ভিন্নতা থাকে। আসুন জেনে নিই, ভ্রমণের ধরন অনুযায়ী প্রস্তুতির ধাপগুলো কেমন হওয়া দরকার।
একা বনাম দলেবলে ভ্রমণে...
ভ্রমণ একাকী ও দলবদ্ধভাবে হওয়ার স্বতন্ত্র কিছু সুবিধা সম্পর্কে জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ট্রাভেল এজেন্সি ট্রিপনেস্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. খালেদ শাহরিয়ার। দিয়েছেন কিছু পরামর্শও—
• একক ভ্রমণের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা সহজ হয়। পাশাপাশি স্বাধীনভাবে সবকিছু করার সুযোগ বেশি। ভ্রমণকারীকে হালকা ব্যাগ সঙ্গে নেওয়াই ভালো। এ ছাড়া নিজের সুরক্ষা ও প্রয়োজনীয় তথ্য আগে থেকেই জেনে নিতে হবে।
• দলীয় ভ্রমণের পরিকল্পনা সহজ করার জন্য সবাই মিলে দায়িত্ব ভাগাভাগি করতে হবে। বিনোদন যেহেতু দলীয়ভাবেই উপভোগ হবে, তাই গেমস বা মিউজিকের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। দলগত ভ্রমণের আনন্দ এক নিমেষেই মাটি হয়ে যাবে, যদি দেখা যায় বিভিন্নজনের আবাস বিভিন্ন জায়গায়। তাই আগে থেকে টিকিট বা রিসোর্ট বুকিং নিশ্চিত করতে হবে।
বাহন ভিন্নতা বিবেচনায় ভ্রমণের প্রস্তুতি
প্রস্তুতি অনেক সময় নির্ভর করে কোন ধরনের বাহনে ভ্রমণে বের হচ্ছেন—তার ওপর। কারণ, বাহন ভেদে কিছু জিনিস সংযোজন-বিয়োজন হয়। যেমন—
• উড়োজাহাজের মাধ্যমে ভ্রমণ দ্রুত এবং আরামদায়ক হলেও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়। ভ্রমণের তারিখ নিশ্চিত হওয়ার পরপরই টিকিট কেটে ফেলুন। আন্তর্জাতিক ভ্রমণে পাসপোর্ট ও ভিসার বৈধতা চেক করুন। এয়ারলাইনসের লাগেজ-সীমা অনুসারে ব্যাগ গোছান। হ্যান্ডব্যাগে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, ওষুধ, চার্জার ইত্যাদি রাখুন। এয়ারপোর্টে পৌঁছান নির্ধারিত সময়ের আগে। নিরাপত্তা চেকিং ও ইমিগ্রেশন প্রসেসের জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখুন।
• নদীমাতৃক বাংলাদেশে এক অনন্য ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা দিতে পারে লঞ্চ। এ ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত তারিখে ভ্রমণের জন্য আগেই টিকিট নিশ্চিত করুন। ভিআইপি বা কেবিন-সুবিধা থাকলে তা বেছে নিন। লাইফ জ্যাকেট বা সেফটি গিয়ার সম্পর্কে সচেতন থাকুন। খাওয়ার পানি, হালকা শুকনা খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখুন। ভ্রমণের আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নিন। ঝড় বা বৃষ্টি এড়িয়ে চলুন।
• ঝক-ঝকা ঝক-ঝক… শব্দে ট্রেন ভ্রমণ আরামদায়ক এবং সময়নিষ্ঠ। বিশেষ করে দলীয় ভ্রমণের জন্য এটি চমৎকার একটি মাধ্যম। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই অগ্রিম টিকিট নিশ্চিত করুন। দল নিয়ে গেলে গ্রুপ টিকিটের সুবিধা নিন। ব্যাগ সহজে বহনযোগ্য করুন। সঙ্গে হালকা কম্বল বা বালিশ রাখতে পারেন। পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় সঙ্গে রাখুন। ভ্রমণের সময় বিনোদিত হতে বই, মিউজিক প্লেয়ার বা কার্ড গেমস সঙ্গে রাখতে পারেন।
• সড়কপথে ভ্রমণের জন্য দেশের অভ্যন্তরে সবচেয়ে সহজলভ্য মাধ্যম বাস। এসি বা নন-এসি বাসের টিকিট সময়মতো কেটে রাখুন। ভ্রমণের সময় আরামদায়ক পোশাক পরুন এবং মাথার নিচে রাখার জন্য কুশন নিতে পারেন। নৈশভ্রমণের ক্ষেত্রে মূল্যবান জিনিস সাবধানে রাখুন।
• ব্যক্তিগত গাড়িতে ভ্রমণ মানেই স্বাধীনতা। তবে এটি যথাযথ পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে। গাড়ি চালানো শুরু করার আগে ইঞ্জিন, ব্রেক, টায়ার ইত্যাদি চেক করুন। প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও টুলকিট সঙ্গে রাখুন। গুগল ম্যাপ বা অন্য নেভিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করে সঠিক রুট নিশ্চিত করুন। দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য পর্যাপ্ত পানি, স্ন্যাকস এবং আরামের উপকরণ রাখুন। এ ছাড়া একা যাত্রা করলে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন, আর একাধিক সদস্য থাকলে বিনোদন উপভোগ করুন।
মনে রাখা জরুরি
ভ্রমণ যেভাবে বা যার সঙ্গেই হোক না কেন, সব সময়ই জরুরি কিছু বিষয় মনে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন মো. খালেদ শাহরিয়ার। যেমন জরুরি ফোন নম্বর ও কাছের চিকিৎসাকেন্দ্রের তথ্য সঙ্গে রাখা। যাত্রাপথে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকা। ভ্রমণকালীন রাস্তার নিয়মকানুন মেনে চলা। বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সঙ্গে ডুয়েল কারেন্সির ব্যবস্থা রাখা। এতে লেনদেন সাশ্রয়ী হয়। সে ক্ষেত্রে যে দেশে যাচ্ছেন সে দেশের মুদ্রা এবং সঙ্গে ইউএস ডলার রাখলে ভালো। আবার অনেকের বিদেশে গিয়ে এয়ারপোর্টে নেমেই ইন্টারনেটের প্রয়োজন পড়ে। অন্য মাধ্যমে এটি ব্যবস্থা করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ফলে ভ্রমণের আগেই হতে হয় বিব্রত। তাই নিশ্চিন্ত থাকতে সেখানকার একটি সিম ক্রয় করা বুদ্ধিমানের কাজ।