‘গোল্ডেন হক’ নামের জাহাজটি বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। ২৩ নাবিক, ক্রুসহ জাহাজটি জিম্মি করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা
‘গোল্ডেন হক’ নামের জাহাজটি বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। ২৩ নাবিক, ক্রুসহ জাহাজটি জিম্মি করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা

জিম্মি নাবিকসহ জাহাজ উদ্ধারে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে

  • গতকাল জিম্মি জাহাজটির নাবিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষ বা নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ হয়নি।

  • সর্বশেষ শুক্রবার পর্যন্ত নাবিকেরা ভালো ছিলেন বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ।

  • তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জাহাজে খাবার ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সোমালিয়ার উপকূলে ২৩ নাবিকসহ জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর মুক্তির বিষয়ে জলদস্যুরা এখনো যোগাযোগ করেনি। যোগাযোগ না করায় দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য অপেক্ষা বাড়ছে।

সাধারণত দস্যুরা নাবিক ও জাহাজ নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নেওয়ার পর সময় নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। বাংলাদেশি জিম্মি জাহাজটি দস্যুদের নিয়ন্ত্রিত সোমালিয়ার উপকূলীয় এলাকায় নেওয়ার পর তিন দিন পেরিয়েছে। এরপরও আরও কিছু সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিম্মি নাবিকসহ জাহাজ উদ্ধারে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। দস্যুরা যোগাযোগ না করলেও আমরা বসে নেই। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি, যাতে দস্যুরা যোগাযোগ করার পর দ্রুত সমঝোতার কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া যায়।’

জাহাজের মালিক ও নাবিকদের পরিবারের খবর নিয়ে জানা গেছে, গতকাল জিম্মি জাহাজটির নাবিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষ বা নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ হয়নি। সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছে শুক্রবার রাতে। সে সময় পর্যন্ত নাবিকেরা ভালো ছিলেন বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ।

গত মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে দস্যুরা ৫৫ হাজার টন কয়লাবাহী জাহাজটি উপকূলে নিয়ে যায়। এরপর দুই দফায় জাহাজটি সরিয়ে নেওয়া হয়। এদিন দুপুরে জাহাজটি গ্যারাকাদ উপকূল থেকে ৭ নটিক্যাল (১ নটিক্যাল মাইল= ১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার) মাইল দূরে ছিল। সেখান থেকে পরদিন শুক্রবার ৪০–৪৫ মাইল উত্তরে নিয়ে যায় দস্যুরা। গতকাল জাহাজটির অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা জানা সম্ভব হয়নি।

নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নেওয়ার কত দিন পর সাধারণত দস্যুরা মুক্তিপণ চায়, এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আগের ঘটনাগুলোতে দস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করার জন্য এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিয়েছে। এ সময় তারা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। মুক্তিপণ দাবি করার জন্য আসল অঙ্ক যা ঠিক হবে, তার চেয়ে বেশি দাবি করে থাকে দস্যুরা। দর–কষাকষি কিংবা আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছাতে হয়। দস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করার পরই আলোচনার পরিবেশ তৈরি হবে।

এদিকে জিম্মি জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের খাবার ও পানি কমে আসছে। এ পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজে কর্মরত এক নাবিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এক বন্দর থেকে আরেক বন্দরে যেতে যত দিন সময় লাগে, তার চেয়ে এক থেকে দুই সপ্তাহের বেশি সময়ের খাবার মজুত রাখা হয় জাহাজে। তবে কোনো কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হতে পারে—এমন আশঙ্কায় শুকনা খাবার বেশি দিনের জন্য মজুত রাখা হয়। এ ছাড়া জাহাজে রান্না, গোসল ও পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানি মজুত রাখা হয়। জাহাজভেদে দিনে তিন থেকে পাঁচ টন পানি লাগে। লবণাক্ততার জন্য জাহাজে সাগরের পানি ব্যবহার করা যায় না; তাই জাহাজে পানি সরবরাহ করা হয় সাহায্যকারী জলযান ‘টাগবোটে’ করে।

জলদস্যুদের কবলে পড়ার সময় এমভি আবদুল্লাহে ২৫ দিনের খাবার ও পানি মজুত ছিল। সেই হিসাবে এখন ওই জাহাজে যে পরিমাণ খাবার ও পানি আছে, তাতে আরও ২০ থেকে ২১ দিন চলার কথা। তবে এখন জিম্মি নাবিকদের পাশাপাশি জলদস্যুরা জাহাজে অবস্থান করছে। ফলে খাবার ও পানির চাহিদা বেড়েছে। জাহাজে সাধারণত হিমায়িত মাছ, মাংস, সবজি এবং ফল, চাল, ডাল, বিস্কুট রাখা হয়।

খাবার ও পানির বিষয়ে জানতে চাইলে জিম্মি জাহাজের মালিক কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, খাবার কমে গেলে শুরুতে দস্যুরাই নিজেদের স্বার্থে জাহাজে জিম্মি ও নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে। তবে দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে খাবারের বিষয়টি নিয়ে প্রথমে আলোচনা করা হবে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জাহাজে খাবার ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়েও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

জিম্মি নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, গতকাল চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানজি পুকুর লেনের ওয়াইএনটি সেন্টারে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের টেলিভিশনে কী দেখাচ্ছে, কী হচ্ছে—সেটি কিন্তু যারা হাইজ্যাক করেছে তারা দেখে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব টেলিভিশন দেখার সুযোগ আছে। যখন এই বিষয়কে অতি গুরুত্ব দেওয়া হয়, জিম্মিদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া যখন ওরা দেখে, তখন হাইজ্যাককারীদের অবস্থান আরও অনমনীয় হয় এবং হচ্ছে। এই নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট (নেতিবাচক প্রভাব) হচ্ছে।’

বিষয়টিকে সবারই সতর্কভাবে দেখা দরকার উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য তো নাবিকদের এবং জাহাজটিকে মুক্ত করা।’