বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রথম সভা শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় সংগঠনের ভবিষ্যৎ রূপরেখা কেমন হবে তা নিয়ে কথা হয়েছে। পাশাপাশি কোনো প্রতিবন্ধকতা এলে সেটি মোকাবিলায় করণীয় কী, সেটিও আলোচনায় এসেছে।
রাজধানীর বাংলামোটরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সভা হয়। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এই সভায় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ১৮ সদস্যের মধ্যে ১৬ জন অংশ নেন।
সভা সূত্র জানায়, প্রথম সভায় মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণ ও সাংগঠনিক বিস্তার, সদস্যদের মধ্যে সমন্বয় এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া সংগঠনের নিজস্ব নিয়মকানুন কেমন হবে তা নিয়ে কথা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ সভা ছিল। এই সভা ছিল পরিচিতিমূলক। একেবারেই প্রাথমিক কিছু বিষয় নিয়ে এখানে কথা হয়েছে।’
সভা সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের কী কী নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে তা নিয়ে কথা হয়েছে। কী প্রক্রিয়ায় নির্বাহী কমিটির সভায় কোনো বিষয় উত্থাপন করা হবে, কেউ অভিযোগ জানাতে চাইলে কীভাবে তা জানাবে—এসব বিষয়েও আলোচনায় এসেছে। পাশাপাশি শৃঙ্খলা মেনে চলার বিষয়ে কথা হয়েছে সভায়।
সভায় জাতীয় রাজনীতির কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে প্রথম আলোকে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয় ২১ নভেম্বর। এর আগে গত ২২ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক টিম বিলুপ্ত করে চার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে হাসনাত আবদুল্লাহকে আহ্বায়ক, আরিফ সোহেলকে সদস্যসচিব, আবদুল হান্নান মাসউদকে মুখ্য সংগঠক ও উমামা ফাতেমাকে মুখপাত্র করা হয়। তাঁরা চারজন পদাধিকারবলে নির্বাহী কমিটিরও সদস্য।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে দেশে টানা আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন একপর্যায়ে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার সেই অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শনিবারের সভার বিষয়ে মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কীভাবে সামনে এগোবে, নির্বাহী কমিটি কীভাবে কাজ করবে, নির্বাহী কমিটি ও আহ্বায়ক কমিটির সম্পর্ক কী হবে—এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মহানগর পর্যায়ে প্রথম কমিটি করেছে কুমিল্লায়। সংগঠনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার বিকেলে ১৯৩ সদস্যের এই কমিটি প্রকাশ করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল আগামী ছয় মাসের জন্য কুমিল্লা মহানগর কমিটি অনুমোদন করেছেন।
এর আগে ১১টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর মধ্যে ২ নভেম্বর কুষ্টিয়া ও নড়াইলে, ৩ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গায়, ১০ নভেম্বর সুনামগঞ্জে, ১১ নভেম্বর নেত্রকোনায়, ১২ নভেম্বর মেহেরপুরে, ১৬ নভেম্বর ঝিনাইদহে, ২১ নভেম্বর শেরপুরে, ২২ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা ও জামালপুর জেলায় আহ্বায়ক কমিটি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। প্রতিটি কমিটিকেই ছয় মাসের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।