ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) নাম পরিবর্তন করে ‘নিবর্তনমূলক’ সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) পাস করে দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। তড়িঘড়ি করে এ আইন পাসের নিন্দা জানিয়ে বৃহস্পতিবার পৃথক বিবৃতি দিয়েছে তারা।
সাইবার নিরাপত্তা আইনে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তারের সুযোগ রাখাসহ বিভিন্ন ধারার সমালোচনা করে সংগঠনগুলো বলছে, এ আইনও মতপ্রকাশে বাধার সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি বলেছে, পুরোনো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে কিছুটা ঝেড়ে–মুছে সংসদে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়েছে। ডিজিটাল আইনের মতোই এ আইনেরও অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগের সুযোগ অবারিত রাখা হয়েছে। ডিএসএর অপপ্রয়োগে এ পর্যন্ত সাত হাজারের ওপর মামলা হয়েছে। নতুন আইনে সেসব মামলা থেকে (আসামিদের) রেহাই দেওয়া হয়নি, মামলাগুলো জীবন্ত রয়েছে। বাক্স্বাধীনতা, মতামত ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে নতুন আইন বাধা হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো সাইবার নিরাপত্তা আইনও সমালোচনা, ভিন্নমত ও মুক্তচিন্তা দমনের ক্ষেত্রে সরকারের হাতে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের বিধান রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাসের প্রতিবাদ জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তাঁর দল থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো সাইবার নিরাপত্তা আইনও জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরকারের চূড়ান্ত হস্তক্ষেপ।
বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনা ও সমাজের বিভিন্ন মহলের আপত্তির মুখেও সাইবার নিরাপত্তা আইন পাসের নিন্দা জানিয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো বলেছে, এ আইন প্রকৃতপক্ষে ‘নিবর্তনের’ আরেকটি হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহৃত হবে।
অংশীজনদের মতামত, প্রস্তাব ও দাবি উপেক্ষা করে একগুঁয়ে মনোভাব নিয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাসের ঘটনায় উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)। এ আইনে নিবর্তনমূলক ধারাগুলো বহাল রেখে মূলত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধোঁকা দেওয়ার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে বলে মনে করে সংগঠনটি।
এক বিবৃতিতে বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই এ আইনও দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং মতপ্রকাশ ও চিন্তার স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করবে। ভীতির পরিবেশও আগের মতোই বিরাজ করবে।
সাইবার নিরাপত্তা আইনে ডিজিটাল আইনের মতো ‘বিপজ্জনক’ ধারা রাখায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। সংগঠনটির সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন পৃথক বিবৃতিতে বলেছেন, অংশীজনদের পরামর্শ উপেক্ষা করে পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের নিবর্তনমূলক ধারা স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা ও হুমকিস্বরূপ।