জিংকসহ অন্যান্য ভিটামিন ও পুষ্টির অভাবে শিশুরা খর্বাকৃতির হচ্ছে এবং অপুষ্টিজনিত নানা সমস্যায় ভুগছে। চালের মাধ্যমে এ অপুষ্টি দূর করা যাবে।
করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবসহ নানা কারণেই দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মানুষ অপেক্ষাকৃত কম দামের চাল ও দানাদার খাবার বেশি খাচ্ছে। এতে পেট ভরলেও অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই পুষ্টিকর খাবার ও জিংকসমৃদ্ধ ভাত খাওয়া বাড়াতে হবে।
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল রোববার ‘বায়োফর্টিফাইড জিংক রাইস সম্প্রসারণের মাধ্যমে অপুষ্টি দূরীকরণে সম্ভাব্যতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) আয়োজিত এ সংলাপে দেশের কৃষি ও পুষ্টিবিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
সংলাপে উপস্থাপন করা মূল প্রবন্ধে গেইন বাংলাদেশের কান্ট্রি লিড আশেক মাহফুজ বলেন, দেশের বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ অর্থসংকটের কারণে পুষ্টিকর অন্যান্য খাবার না পেয়ে তিন বেলা ভাত খেয়ে টিকে আছে। ফলে প্রায় ৫৩ শতাংশ শিশু ভিটামিন এ, ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ জিংক, ২৬ শতাংশ ভিটামিন ডি, ২২ দশমিক ৩ শতাংশ রক্তস্বল্পতা ও ২০ শতাংশ আয়োডিনের অভাবে ভুগছে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশের প্রায় ৫৫ শতাংশ অর্থাৎ ৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষের শরীরে জিংকের অভাব রয়েছে। ৩৫ লাখ প্রাক্-স্কুলবয়সী শিশু ও ২ কোটি নারী জিংকের ঘাটতিতে ভুগছেন। যে কারণে শিশুরা খর্বাকৃতির হয়ে যাচ্ছে ও প্রায়ই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
সংলাপে বক্তারা বলেন, জিংকসহ অন্যান্য ভিটামিন ও পুষ্টির অভাবে শিশুরা খর্বাকৃতির হচ্ছে ও অপুষ্টিজনিত নানা সমস্যায় ভুগছে। চালের মাধ্যমে এ অপুষ্টি দূর করা যাবে। কারণ, মোট চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পুষ্টি চালে পাওয়া সম্ভব। তাই জিংকসমৃদ্ধ চালের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি এ চাল জনপ্রিয় করতে হবে।
প্রধান অতিথি কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি গ্রামে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে যেসব শিশুকে দেখি, তাদের বেশির ভাগই খর্বাকৃতি ও অপুষ্টিতে ভুগছে। একসময় আমরা জাপানিদের খাটো বলতাম। এখন আমরা খাটো হয়ে যাচ্ছি। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। নারী ও শিশুদের মধ্যে জিংকের ঘাটতি আতঙ্কজনক পর্যায়ে চলে গেছে।’
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবির বলেন, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাতটি জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে ব্রি। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) জিংকসমৃদ্ধ উচ্চফলনশীল আমনের একটি জাত ‘বিনা ধান-২০’ উদ্ভাবন করেছে।