সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের এক দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’–এর চতুর্থ দিনের কর্মসূচিতে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশের বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে এগিয়ে গেলে কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে পাঁচটায় চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাস মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এরপর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে দেড় কিলোমিটার দূরত্বের ২ নম্বর গেট এলাকায় এলে সেখানেও পুলিশ ধাওয়া দিয়ে লাঠিপেটা করে। এসব উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ২ নম্বর গেটেই অবস্থান নেন। সেখানে পুলিশও আছে। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় আহত কয়েকজন সড়কে শুয়ে পড়েন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের হামলায় তাঁদের চার থেকে পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া একজন ছাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁরা এ হামলার নিন্দা জানান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সড়ক থেকে উঠবেন না।
জানতে চাইলে লাঠিপেটার বিষয়টি অস্বীকার করেন নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান। আজ সন্ধ্যা ছয়টায় ২ নম্বর গেট এলাকায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনায় ঘটেনি। জনদুর্ভোগ কমাতে আমরা টাইগারপাস এলাকায় প্রথম ব্যারিকেড দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা ব্যারিকেড ভেঙে এখানে এসেছে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের ব্যানারে চতুর্থ দিনের মতো ব্লকেড কর্মসূচি হয়। এই কর্মসূচিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা যোগ দিয়েছেন। সরকারি চাকরিতে সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রাখার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।
সরেজমিন দেখা যায়, বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের (বটতলী) ৫ নম্বর লাইনটি অবরোধ করেন। এ লাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী মহানগর গোধূলি দাঁড়ানো ছিল। শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করে দাঁড়ানোর দুই মিনিটের মধ্যে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়।
পুলিশের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কর্মসূচি ছিল সাড়ে তিনটায়, আপনারা সাড়ে তিনটায় শুরু করেন। আর রেলস্টেশন কেপিআইভুক্ত জায়গা। এখানে অবস্থান না নিয়ে দেওয়ানহাট অথবা কদমতলী অবস্থান নিন।’
পুলিশের এসব কথার পরই শিক্ষার্থীরা রেললাইন ছেড়ে দেন। পরে শিক্ষার্থীরা বেলা ২টা ৫০ মিনিটের দিকে পুরোনো রেলস্টেশনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে আগে থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। শিক্ষার্থীরা পুরোনো রেলস্টেশনের ফটক দিয়ে বাইরে আসার পরই রেলওয়ে কর্মকর্তারা ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে পুরোনো স্টেশনের সামনে এসে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এরপর একটি মিছিল নিয়ে পুরোনো স্টেশন থেকে কদমতলী হয়ে টাইগারপাস এলাকায় আসেন। টাইগারপাস এলাকায়ও আগে থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। সেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। এ নিয়ে বিকেল ৪টা ২০ থেকে ৪টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত পুলিশ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্কাতর্কি চলে। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ২ নম্বর গেটের দিকে রওনা হন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। রিট আবেদনকারীপক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী গত মঙ্গলবার আবেদন করেন। দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।