নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাবের হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্ত (পোস্টমর্টেম) প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র দেখতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষকে এসব কাগজ ও তথ্য মঙ্গলবার আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। ওই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন নজরে আনার পর আজ সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই সব তথ্য দাখিল করতে বলেন।
আদালত বলেছেন, ‘সুরতহাল ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং কী মামলার কারণে তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল—সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট আমরা দেখব।’ ভুক্তভোগীকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কার কাস্টডিতে নিয়ে গিয়েছিল এবং কাদের উপস্থিতিতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাঁদের নাম–পদবিও রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেছেন আদালত।
এর আগে ‘উইমেন ডাইস ইন র্যাব কাস্টডি’ শিরোনামে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে আজ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। তিনি বলেন, গত বুধবার জেসমিনকে আটক করে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয় বলে প্রতিবেদনে এসেছে। আটকের ৩১ ঘণ্টা পর তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। গত শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর মৃত্যু হয়। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে বলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন। নিহত নারীর পরিবার অভিযোগ করেছে, নির্যাতনে ওই নারীর হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে এসেছে। যতটুকু জানা গেছে, তাতে ওই ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি। বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত।
এ সময় আদালত ওই ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, তা খোঁজ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেন। রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে পরে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান আদালতে বলেন, ২৪ মার্চ ওই নারীর মৃত্যু হয়। সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
আদালত বলেন, ‘জানতে চেয়েছি, কোনো মামলা হয়েছে কি না?’ তখন আবুল কালাম খান বলেন, এখনো হয়নি। লাশ হস্তান্তরের পর রাষ্ট্র কেন, পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত মামলা করা হয়নি। একপর্যায়ে আদালত বলেন, পরিবার মামলা করেনি—কী হয়েছে? রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব নেই? অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মামলা করতে পারে।
আদালত বলেন, পোস্টমর্টেম হয়েছে কি না? তখন হ্যাঁ–সূচক জবাব দিয়ে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান বলেন, সময় দিলে পূর্ণাঙ্গ তথ্যসহ কাগজপত্র দাখিল করা যাবে। আদালত বলেন, পত্রিকায় এসেছে হেড (মাথায়) ইনজুরি, চিকিৎসক কী বলেছেন? তখন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ জন্য তো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেতে হবে।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, এখন ফ্যাক্স করে পোস্টমর্টেম রিপোর্টের ফ্যাক্টস পাঠাতে বলেন। দেশজুড়ে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তখন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যে আদালতের কার্যদিবস শেষ হচ্ছে।
এই পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘মঙ্গলবার রাখা হচ্ছে। আমরা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখব।’ পত্রিকার খবর আদালতের নজরে আনা আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, কোনো মামলা হয়েছে কি না, তা ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করবেন। কোন কোন ইস্যু হাইলাইট করতে চান, তা উল্লেখ করে লিখিত আবেদন প্রস্তুত করেও নিয়ে আসতে পারেন।’
আদালত আরও বলেন, পত্রিকায় এসেছে, ওই নারীর মাথায় আঘাতের কথা বলেছেন চিকিৎসক। পত্রিকার প্রতিবেদন ধরে তো বিচার করা যাবে না। সম্পূর্ণ তথ্য লাগবে। আগে থেকে মাথায় ইনজুরি ছিল কি না, এটি নতুন ইনজুরি কি না এবং এই ইনজুরির কারণে মৃত্যু হয়েছে কি না—এসব পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জানা যাবে। রাষ্ট্রপক্ষ এ–সংক্রান্ত কাগজপত্র দাখিল করবে।