‘বাংলাদেশের মানুষের জন্য, যারা আমার জীবনে আক্ষরিক ও রূপক দুই অর্থেই দাগ কেটে গেছে’। সদ্য প্রকাশিত ইংরেজি বই ‘ভিনসেন্ট অব বাংলাদেশ’-এ বাংলাদেশের মানুষকে উৎসর্গ করে লাইনটি লিখেছেন লেখক অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাং। বইয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে জনগণ। কঠিন অবস্থার মধ্যেও এ দেশের মানুষ হাল ছাড়ে না। শিক্ষার্থীরা হচ্ছে খনি থেকে তোলা হীরা। তাদের যথাযথ শিক্ষা-যত্নে নিখুঁত আকৃতি দিতে হয়।
‘ভিনসেন্ট অব বাংলাদেশ’ বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। এ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর সভাকক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রথমা প্রকাশন।
বইটি প্রকাশ উপলক্ষে দুই দিনের সফরে গতকাল সোমবার বাংলাদেশে আসেন অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাং। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বইটি লেখার উদ্দেশ্য এবং উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনে বাংলাদেশের কী করা উচিত, তা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার জন্য যেটা ঠিক, সেটাই করা উচিত। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য থাকার সময় অধ্যাপক ভিনসেন্ট চার বছর বাংলাদেশকে কাছ থেকে দেখেছেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর ভাবনা, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলা করার উপায় এবং তাঁর প্রত্যাশার কথা তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর বইয়ে। বইটিতে তিনি নারী-পুরুষের অসমতা, বাল্যবিবাহসহ অনেক সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, যদি শিক্ষার প্রতি যত্নশীল হওয়া যায়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্যান্য সমস্যা কমে আসবে। আরও লিখেছেন, বাংলাদেশে মানসম্মত শিক্ষা ও সুশাসনের অভাব রয়েছে।
উচ্চশিক্ষাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি উল্লেখ করে ভিনসেন্ট বলেন, শিক্ষা ছাড়া কোনো পরিবর্তন সম্ভব না। একদম গোড়া থেকে শিক্ষার ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শুধু অর্থ আয় নয়, শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ভিনসেন্ট বলেন, ‘তিনি অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। কাজের প্রতি তাঁর দারুণ আগ্রহ ছিল এবং তিনি উদার মনের অধিকারী ছিলেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভিসি হওয়ার আগে ঢাকায় তাঁর সঙ্গে আলাপে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আমার মতের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম, ঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি সময় ধরে টিকে থাকে।’
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, গত এক বছরে তাঁর পড়া বইগুলোর মধ্যে ‘ভিনসেন্ট অব বাংলাদেশ’ বইটি সেরা। লেখক নিজের জীবনের গল্প বলেছেন। জেলে পরিবার থেকে উঠে আসা অধ্যাপক ভিনসেন্ট পড়েছেন বিশ্বের নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বইটিতে তিনি মস্তিষ্ক নয়, হৃদয় যা বলে তা অনুসরণ করতে বলেছেন। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি নির্মোহভাবে তাঁর মতামত তুলে ধরেছেন। বইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণামূলক।
বইটি প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাইমুন আলম অনুষ্ঠানে বলেন, শিক্ষা থেকে শুরু করে শিল্প—নানা জগতে বিচরণ রয়েছে অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাংয়ের। বইটি পড়ে একজন শিক্ষার্থীও যদি অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে, তাহলেও এই বই প্রকাশের সার্থকতা থাকবে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথমা প্রকাশনের সমন্বয়ক মেরিনা ইয়াসমিন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান, প্রথম আলোর ইংরেজি ওয়েবের প্রধান আয়েশা কবির, প্রথম আলোর উপসম্পাদক এ কে এম জাকারিয়া, প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র, প্রথমা প্রকাশনের সমন্বয়ক জাভেদ হুসেন।
অনুষ্ঠান শেষে প্রথমা প্রকাশনার পক্ষ থেকে কেক কেটে অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাংয়ের জন্মদিন উদ্যাপন করা হয়।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাং। ঢাকায় আসার আগে তিনি চীনের শেনঝেনে অবস্থিত দ্য চায়নিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ে প্র্যাকটিসের অব ম্যানেজমেন্ট ইকোনমিকস বিভাগে অধ্যাপক এবং ইনস্টিটিউশনাল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ছিলেন। এর আগে তিনি ওমানের মাসকাটে ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজিতে প্রতিষ্ঠাকালীন প্রেসিডেন্ট এবং পরিকল্পনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সিলিকন ভ্যালিতে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। এমআইটি থেকে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে পিএইচডি করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।