সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামীকে হারিয়ে পাঁচ শিশুসন্তানকে নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন সোনিয়া খাতুন (২৪)। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের চরবর্ণিয়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন সোনিয়ার স্বামী সানোয়ার হোসেন।
সানোয়ারের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সানোয়ারের স্ত্রীর মৃত্যু হলে পারিবারিকভাবে তিনি স্ত্রীর ছোট বোন সোনিয়াকে বিয়ে করেন। প্রথম পক্ষের তিন সন্তান ও সোনিয়ার সংসারে দুই সন্তান ছিল সানোয়ারের। তারা সবাই ছোট। সানোয়ার বেড়াঘাট এলাকায় জাহাজ থেকে মালামাল খালাসের কাজ করতেন। সেখান থেকে প্রতিদিন যে আয় হতো তা দিয়েই সংসার চলত।
সোনিয়া খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি এই পাঁচ শিশুসন্তান নিয়্যা এহুন কোনে যামু। কী করমু বুজব্যার পরতেছিন্যা। ছোট কোলের মেয়েডো এহুনও তোলা দুধ খায়। ট্যাহার দুঃখে হেই দুধও কিনবার পারত্যাছিন্যা। গত কয়দিন দইরা ছেলে মেয়ে কাহোকই ঠিকমতো খাইব্যার দিব্যার পারতেছিন্যা।’
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে ঈদের পরদিন মঙ্গলবার সকালে শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের চরবর্ণিয়া গ্রামের আখের উদ্দিন পক্ষ ও সায়েম হোসেন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র, টেঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। একপর্যায়ে সায়েম হোসেন পক্ষের সানোয়ার হোসেন (৩৫) গুরুতর আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ৪০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে বুধবার বিকেলে সায়েম হোসেন পক্ষের তামিম হোসেন (১৫) নামের এক কিশোর ও আখের উদ্দিন পক্ষের ফরহাদ হোসেন (৪০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়।
গালা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইদ্রিস আলী বলেন, আখের উদ্দিন ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে সায়েম হোসেন ৩ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে বিবাদ চলে আসছিল। মাঝেমধ্যেই তাঁরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তেন। এর আগে সেসব সংঘর্ষে শুধু আহতের ঘটনা ঘটলেও এবারের সংঘর্ষে পাশের গ্রামের লোকজন যোগ দেওয়ায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার দুপুরে চরবর্ণিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তিন গ্রামের সম্মিলিত কবরস্থানে নিহত তিনজনের লাশ দাফন করা হয়েছে। গ্রামের বেশ কিছু বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে। পুরো গ্রাম পুরুষশূন্য। কয়েকটি বাড়িতে নারীদের দেখা গেছে। নিহত ব্যক্তির বাড়িতে চলছে মাতম।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে ও সন্ধ্যায় দাফন করা হয়েছে। নিহত সানোয়ার হোসেনের মা আনতিরি বেগম বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে ১২৫ জনের নামে মামলা করেছেন। এরই মধ্যে এজাহারভুক্ত ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিহত তিনজনের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।