ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সন্ধ্যায় ঢাকায় আসছেন

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোত্রা ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে
ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় আসার কথা ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোত্রার। কাছাকাছি সময়ে ওয়াশিংটন থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলের ঢাকায় আসার কথা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিনয় কোত্রা ও ডেরেক শোলের আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সূচি চূড়ান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সফরকালে তাঁরা একাধিক আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের প্রস্তুতি

দুই দিনের সফরে বিনয় কোত্রা ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় আসবেন। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আয়োজক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদানের কথা রয়েছে। কাল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বিনয় কোত্রা। পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত নয়াদিল্লি সফর নিয়ে আলোচনা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলতি বছর দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েকটি বৈঠক হবে। এসব বৈঠকের বিষয়ে কাল দুই পররাষ্ট্রসচিবের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সঙ্গে তাঁর সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে বিনয় কোত্রার এটি প্রথম ঢাকা সফর। তাঁর এই সফরকালে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। গত এক বছরে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের অনেকগুলো বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা হবে।

মাসুদ বিন মোমেন আরও বলেন, আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে জি-২০-এর অষ্টাদশ শীর্ষ সম্মেলন হবে। স্বাগতিক ভারত এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও বিনয় কোত্রার সঙ্গে আলোচনা হবে।

ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বেশি দামে কয়লা কেনার প্রস্তাবের বিষয়টি নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে বিনয় কোত্রার সঙ্গে কথা হবে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বেশি দামে কয়লা কেনার বিষয়টির সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো ইনপুট (তথ্য-উপাত্ত) পেলে আলোচনা হবে।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর হচ্ছে, এটা প্রায় নিশ্চিত। সেই সফরে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের বাণিজ্যিক উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আসামের নুমালিগড়ের তেল শোধনাগার থেকে এই পাইপলাইনে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে ডিজেল সরবরাহ করা হবে।

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, চলতি বছর প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকসহ নানা স্তরের ১৫ থেকে ২০টি বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে জেআরসির মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকের বিষয়ে ভারতের অনীহা রয়েছে। তারপরও বাংলাদেশের প্রত্যাশা, দীর্ঘ এক যুগ পর মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকটি হবে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে স্বরাষ্ট্র, নৌপরিবহন, বাণিজ্য, পরিবেশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সম্মেলনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠক হবে।

ডেরেক শোলের সফরে সম্পর্ক জোরদারে নজর

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক জোরদার করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে আজ ঢাকা সফরে আসছেন। তাঁর সফরে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

ডেরেক শোলের সফরের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির একটি অগ্রবর্তী দল বাংলাদেশে এসেছে। দলটি গত রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে। তারা সেখানকার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে ঢাকায় ফিরেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ডেরেক শোলে আগামীকাল পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে প্রাতরাশ বৈঠক করবেন। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।সরকারি পর্যায়ের এসব বৈঠকের পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন ডেরেক শোলে।

দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়া ও মানবিক সহায়তার বিষয়টি ডেরেক শোলের এই সফরে প্রাধান্য পাবে।

এ ছাড়া ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস), দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নিরাপত্তা ইস্যু ডেরেক শোলের এই সফরে আলোচিত হতে পারে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের পরামর্শ অনুযায়ী, বিশেষ কূটনৈতিক দায়িত্ব সামলে থাকেন ডেরেক শোলে। তাঁর সফরে র‍্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।

দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, র‍্যাব ইস্যুতে অস্বস্তি থাকলেও ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের অন্য ইস্যুগুলো এগিয়ে নিতে আন্তরিক উভয় দেশ। সে কারণে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার ঢাকা সফর করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফর করেন। যদিও রহস্যজনক কারণে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারা সি ম্যাকডনান্ডের ঢাকা সফরটি শেষ সময়ে এসে স্থগিত করা হয়। সফরটি ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি হওয়ার কথা ছিল। উভয় দেশ এখন ডেরেক শোলের ঢাকা সফরটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।