কর্তৃত্ববাদী শক্তির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে একটি সুশাসিত, অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমুক্ত স্বদেশ বিনির্মাণের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগকে বাস্তবে রূপ দিতে সরকার, রাজনৈতিক দল, জনসাধারণ ও তরুণ প্রজন্মের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে জড়িত সদস্যরা।
আজ মঙ্গলবার টিআইবির ধানমন্ডি কার্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ৪৫ জন সদস্যের অংশগ্রহণে ‘বার্ষিক সভা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন টিআইবি সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস খান। গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
বার্ষিক সভা থেকে টিআইবির সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যেসব শিক্ষার্থী-জনতা নিহত ও আহত হয়েছেন, দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন সেসব ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব ঘটনার জবাবদিহি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, টিআইবির সদস্যগণ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো, কর্তৃত্ববাদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে জনমনে মুক্ত গণমাধ্যম এবং স্বাধীন ও অসংকোচ মতপ্রকাশের যে প্রত্যাশার সঞ্চার হয়েছে, তা পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ ছাড়া সবাই যাতে চিন্তা, বিবেক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা করতে পারেন, তার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসনকাঠামোর মতো স্বাধীন মত ও সাংবাদিকতার কারণে কেউ যেন হয়রানি, দোসর আখ্যায়িত বা ট্যাগিংয়ের শিকার না হন, সে ব্যাপারে সবাইকে উদার ও সহিষ্ণু আচরণ করার আহ্বান জানান তাঁরা।
একই সঙ্গে ভিন্নমত দমন ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত জনমনে যে স্বস্তির সঞ্চার করেছিল, সেখানে পর্যাপ্ত বিশ্লেষণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পর্যালোচনা ব্যতিরেকে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪’ জারির উদ্যোগ এটির অপব্যবহার হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করেন টিআইবির সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত প্রদানের পর্যাপ্ত সুযোগ ও তাঁদের সুপারিশের আলোকে অধ্যাদেশটি জারি এবং গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট সব আইন, নীতি ও বিধিমালা যথাযথ পর্যালোচনা সাপেক্ষে সংশোধন এবং নতুন সমন্বিত গণমাধ্যম আইন প্রণয়ন করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তাঁরা।
টিআইবির সদস্যদের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, চরম স্বেচ্ছাচারী শাসনকাঠামোতে সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতিতে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছিল। দুদকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে দুর্নীতির সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে সাধারণ জনগণ জিম্মি হয়ে দুর্নীতিকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এ ধরনের বাস্তবতায় সম্প্রতি দুদকে নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। তাই শুধু নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়; বরং প্রতিষ্ঠানটিকে জনবান্ধব ও দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজাতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান টিআইবির সদস্যরা।