মাদারীপুর হর্টিকালচার সেন্টারে ফুটেছে রূপেলিয়া ফুল
মাদারীপুর হর্টিকালচার সেন্টারে ফুটেছে রূপেলিয়া ফুল

অপরূপা রূপেলিয়া

বসন্তের এক ভোরে মাদারীপুরের হর্টিকালচার সেন্টারে হঠাৎ নাকে এল গোলাপ ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। চারপাশে তাকালাম, কিন্তু কোনো গোলাপগাছ চোখে পড়ল না। গোলাপের ঘ্রাণটা তাহলে আসছে কোথা থেকে? গোলাপগাছ চোখে না পড়লেও একটি ঝোপালো গাছের ভেতরে ফুটে থাকা থোকা থোকা গোলাপি ফুল চোখে পড়ল। গাছটার ডালপালা বুকসমান উঁচু। ডালের মাথায় মাথায় ফুটে রয়েছে দু–চারটি করে ফুল আর উজ্জ্বল মেরুন রঙের না–ফোটা অনেক কুঁড়ি। আবিষ্কার করলাম, গোলাপের গন্ধ আসলে আসছে ওই ফুল থেকে। ফুলের রং মিষ্টি গোলাপি বা গোলাপি সাদা, ঘ্রাণও গোলাপের মতো; কিন্তু ফুলটা গোলাপ না, রূপেলিয়া বা ক্রিমফ্রুট।

এ দুটি ফুলটির ইংরেজি নাম। বাংলায় নাম লতাকরবী, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Strophanthus gratus ও গোত্র অ্যাপোসাইনেসি। এর মানে রূপেলিয়া টগর করবী গোত্রের ফুল। তবে টগরগাছের সঙ্গে এর মিল কম; বরং ফুলের পাপড়িগুলো টগরের চেয়ে বেশি মেলে সিঙ্গেল বা একহারা পাপড়ির গন্ধরাজ বা করবী ফুলের সঙ্গে। তবে রূপেলিয়া ফুল আকারে গন্ধরাজ ফুলের অন্তত অর্ধেক, এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত পাপড়ির বিস্তার বড়জোর ১০ সেন্টিমিটার, পাঁচটি পাপড়ি পাঁচ দিকে মেলে ধরেছে, মাঝখানটা লালচে। পাপড়ির গোড়ায় বৃত্তাকারে এক সারিতে কাঠির মতো কয়েকটি জননকেশর তির্যকভাবে খাড়া হয়ে রয়েছে।

ফুলগুলোকে ঘিরে রয়েছে উজ্জ্বল কোমল সবুজ পাতা, ডাল-পাতা ছড়ানো–ছিটানো, এলোমেলো ভঙ্গিতে যে যার মতো যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে গেছে। যাবেই–বা না কেন? গাছের স্বভাবই তো লতিয়ে চলা। গাছটা কাষ্ঠল শায়িত লতানো স্বভাবের, বেয়ে যেতে দিলে ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কিন্তু সামনে থাকা একমাত্র গাছটির লতা ততটা বাড়েনি। বোধ হয় ছেঁটে খাটো করে রাখায় সেটি ঝোপ করে ফেলেছে।

ফুল ফোটার কথা গ্রীষ্মে; কিন্তু বসন্তের শুরু থেকেই নাকি গাছটায় ফুল ফুটতে শুরু করেছে। ফুল ফুটতে থাকবে বর্ষাকাল পর্যন্ত। সুদীর্ঘ এই পুষ্প প্রস্ফুটনের কথা জানান মাদারীপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক আশুতোষ কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, চার বছর আগে ওখানে গাছটি লাগানো হয়েছিল অলকানন্দা বা অ্যালামন্ডা মনে করে। গাছটা লতানো ও পাতাগুলো দেখতে অনেকটা অ্যালামন্ডা বা রাবার ভাইন গাছের মতো বলেই এই বিভ্রান্তি। চারা গাছটায় ফুল ছিল না বলে তখন এ বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। অবশ্য এখনো গাছটার পাশের নামফলকে ‘অ্যালামন্ডা’ই লেখা রয়েছে। প্রকৃত নাম লেখা দরকার বলে পরামর্শ দিলাম। বললাম, ‘গাছটা আমাদের দেশের না। মধ্য আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে সেনেগাল থেকে কঙ্গো পর্যন্ত এ গাছ সহজলভ্য হলেও আমাদের দেশে খুব কম চোখে পড়ে। নার্সারি ব্যবসায়ীদের কল্যাণে এখন ছড়াতে শুরু করেছে। ঢাকায় রমনা উদ্যান ও মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে এ গাছ দেখেছি।’

আশুতোষ কুমার বিশ্বাসও রূপেলিয়া ফুল নিয়ে তাঁর কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানান। ডালের ডগায় ডগায় গুচ্ছ ধরে দলা দলা ফুলের কুঁড়ি আসে। দেখে মনে হয়, কাল-পরশু ফুল ফুটবে। কিন্তু সেসব কুঁড়ি ফুল হয়ে ফুটতে বেশ কয়েক দিন লেগে যায়। তবে অসংখ্য কুঁড়িভরা সবুজ পাতার ঝোপালো গাছেরও আলাদা একটি সৌন্দর্য আছে। এ গাছের ফল পাকে শরতে, তাতে বীজ হয়। বীজ থেকে চারা তৈরি করে দেখা হয়নি। তবে গুটিকলম করে চারা তৈরির চেষ্টা করেও সফলতা পাওয়া যায়নি। কাষ্ঠল ডাল কেটে কলম করা যেতে পারে। বাগানে বা খিলানের ওপর তুলে দেওয়ার জন্য এ গাছ লাগানো যায়।

মৃত্যুঞ্জয় রায়: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক