হ্রদের বুকে ভাসমান হাউস বোটে সারা দিন ঘোরাঘুরি। এরপর সেই হাউস বোটেই রাতযাপন। রাঙামাটি ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে যেন এক বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে হাউস বোট। পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ায় গত পাঁচ বছরে ১৪টি হাউস বোট নেমেছে কাপ্তাই হ্রদের নীল পানিতে। প্রতিটি হাউস বোটে রয়েছে পর্যটকদের জন্য আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।
হাউস বোটমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালে কাপ্তাই হ্রদে প্রথম প্রমোদিনী নামে একটি হাউস বোট নামানো হয়। পরে মাউরুম নামে চালু হয় দ্বিতীয় হাউস বোটটি। এরপর ক্রমান্বয়ে হাউস বোট বাড়তে থাকে। এসব হাউস বোটে পর্যটকদের জন্য রয়েছে অবস্থানের সময় অনুযায়ী নানা প্যাকেজ।
কাপ্তাই হ্রদে থাকা এসব হাউস বোটের সবই দ্বিতল। প্রতিটি হাউস বোটের ৬টি কক্ষে ১২ জন রাতযাপন করতে পারেন। তবে কেবল দিনে ঘোরাঘুরি করলে ২০ জন পর্যটক একসঙ্গে হাউস বোট ভাড়া নিতে পারেন। হাউস বোটে নান্দনিক ডাইনিং, আধুনিক শৌচাগার, বিনোদনের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এসব হাউস বোটে করে সুবলং ঝরনা, নির্বাণ নগর বৌদ্ধ বিহার, পলওয়েল পার্ক, বড়গাঙ, কায়াক পয়েন্ট, বড়াদম ভিউ পয়েন্ট, ঝুলন্ত ব্রিজ, বার্গী লেক ভ্যালিসহ কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষে গড়ে ওঠা বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র ও পর্যটন স্পটে যেতে পারেন পর্যটকেরা। হাউস বোটে পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। রয়েছে বারবিকিউ পার্টি করার সুযোগও।
খাবার ও ঘোরাঘুরি ছাড়া কেবল প্রতিটি হাউস বোটে এক দিন অবস্থানের জন্য (১২ জন) ভাড়া দিতে হয় ১৮-২০ হাজার টাকা। তবে ঘোরাঘুরি ও খাবারসহ খরচ পড়ে ৫০ হাজারের মতো। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া অন্য সময়গুলোতে অনেক সময় ছাড় পাওয়া যায়। রাঙামাটি শহরের সুবিধামতো এলাকা থেকে হাউস বোটে ওঠা যায়। সাধারণত রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্স ঘাট, শহীদ মিনার ঘাট, রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট, সমতা ঘাট, রাজবাড়ি ঘাট ও শিল্পকলা ঘাটে হাউস বোট থাকে।
সম্প্রতি রাঙামাটিতে এসে হাউস বোটে ঘোরাঘুরি ও রাতযাপন করেছেন ঢাকার মিরপুরের মো. মহি উদ্দিন ও তাঁর ১০ সহপাঠী। তিনি বলেন, ‘আমরা ১০ জন বন্ধু মিলে একটি হাউস বোটে এক দিন থেকেছি। হাউস বোটে রাতযাপনের আনন্দ অন্য রকম। হ্রদের চারদিকে পাহাড়, এর মধ্যেই নীল পানির ওপর ভাসমান বোটে রাতযাপনে খুবই ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতেও রাঙামাটিতে এলে হাউস বোটে থাকার পরিকল্পনা থাকবে।’
প্রমোদিনী বোট লাইফের ব্যবস্থাপক মিঠু চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের চারটি হাউস বোট রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদে সারা বছরই এসব বোটে পর্যটক থাকে। তবে শীত মৌসুমে হাউস বোটের জন্য পর্যটকদের চাপ বেশি। রাঙামাটির অন্যান্য স্থানের তুলনায় হ্রদে শীত কম। তাই হাউস বোটে থাকতে ভালো লাগে।’
‘স্বপ্ন ডিঙি’ ও ‘সুখের তরী’ নামের দুটি হাউস বোটের মালিক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার দুটি হাউস বোট ভাড়া দিচ্ছি প্রায় চার বছর ধরে। রাঙামাটিতে আসা পর্যটকদের মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ হাউস বোটে ঘোরাঘুরি করেন। অনেকে হাউস বোটের বিষয়টি জানেন না। বছর দুয়েক ধরে পর্যটকেরা কিছুটা হাউস বোটমুখী হচ্ছেন।’