সরকারি কর্মচারীদের নিয়মবহির্ভূতভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার। প্রকল্প ও সরকারি দপ্তর-বিভাগগুলোর গাড়ি অবৈধভাবে ব্যবহার বন্ধে ওই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় পাঠানো হয়েছে। সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো জরুরি সভা করে এ ধরনের গাড়ির ব্যবহার বন্ধের ব্যাপারে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গতকাল এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ গাড়িগুলো সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থা, ব্যাংক-বিমা, কোম্পানি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত ছিল।
এ ব্যাপারে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ওই চিঠির বিষয়টি শুনেছি। আমাদের বেশির ভাগ গাড়ি ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসকেরা ব্যবহার করে থাকেন। সেখানে এ ধরনের সুযোগ নেই। তারপরও কেউ নিয়মবহির্ভূতভাবে একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছেন কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখব।’
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের হিসাবে সরকারি পরিবহন পুলে প্রায় দুই হাজার গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ২০০টি গাড়ি। বাকি গাড়িগুলো স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যবহার করে থাকেন। এসব গাড়ির তেল ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সরকারিভাবে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর এবং প্রকল্পের গাড়ির হিসাব থাকার কথা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ—আইএমইডির দপ্তরে। নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর এবং শেষ হওয়ার পর গাড়ির হিসাব ওই সংস্থার কাছে দিতে হবে। কিন্তু তাদের কাছে গাড়ির কোনো হিসাব নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রকল্পগুলোয় তিন থেকে চার হাজার গাড়ি থাকার কথা।
আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি দপ্তর এবং প্রকল্পগুলো থেকে নিয়ম অনুযায়ী আমাদের কাছে গাড়ির হিসাব দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তারা সাধারণত তা করে না। ফলে প্রকল্পের গাড়ির হিসাব দ্রুত দেওয়ার জন্য নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে।’
গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে দেওয়া গাড়ির বিষয়ে চিঠি ইতিমধ্যে আইএমইডিতে পৌঁছেছে। ওই বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে সভা করে সরকারি দপ্তরগুলোর কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই চিঠি চলতি সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় পৌঁছানোর নির্দেশেও দেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের চিঠিতে বলা হয়, প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়িসেবা নগদায়ন নীতিমালা-২০২০-এর আওতায় গাড়ির ঋণ নেওয়া হয়েছে। গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ পুরো অর্থ (৫০ হাজার টাকা) নিচ্ছেন। আবার বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ব্যবহার করছেন। ফলে জনপ্রশাসনে বিশৃঙ্খলা ও আর্থিক অপচয়ের কারণ ঘটছে।
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই উদ্যোগ একটি ইতিবাচক মাত্রা নিয়ে আসবে। এটা আমাদের কাম্য ছিল। তবে যেসব সরকারি কর্মকর্তা নিয়মবহির্ভূতভাবে গাড়ি ব্যবহার করেছেন, তাঁদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যাতে সবার কাছে একটি বার্তা যায় যে এ ধরনের কাজ আর করা যাবে না।’