মেট্রোরেল
মেট্রোরেল

মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন শিগগিরই চালু হবে, শুক্রবার চলাচলের ঘোষণাও আসছে

ঢাকার জনপ্রিয় গণপরিবহন মেট্রোরেল নিয়ে শিগগিরই সুখবর আসছে। বন্ধ কাজীপাড়া স্টেশন শিগগিরই চালু হবে এবং শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনও মেট্রোরেল চলবে—এমন ঘোষণা দেওয়া হবে কয়েক দিনের মধ্যে।

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটির সূত্র বলছে, আগামী বুধবারই নতুন ঘোষণা আসতে পারে। গত সপ্তাহে ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে মেরামতের কাজ শুরু হয়। আজ শনিবার স্টেশন চালুর কারিগরি নানাদিক পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। আর শুক্রবার মেট্রোরেল চলাচল শুরু করার জন্য জনবলের কাজের পালা (রোস্টার) প্রায় ঠিক হয়ে গেছে।

ডিএমটিসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ গত সপ্তাহে বাতিল করে সরকার। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন মোহাম্মদ আবদুর রউফ। দায়িত্ব নিয়েই তিনি দ্রুত কাজীপাড়া স্টেশন চালু এবং শুক্রবারে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করার ওপর জোর দিয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবীর খান দায়িত্ব নেওয়ার পর শুক্রবারও মেট্রোরেল চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এরপর ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে।

ডিএমটিসিএলের নতুন ব্যবস্থাপনা আবদুর রউফ আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, কাজীপাড়া স্টেশনটি স্থানীয়ভাবে পাওয়া যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও উপকরণ দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দ্রুত যাত্রীদের স্বস্তি দেওয়া। এ জন্য সাশ্রয়ী তবে নিরাপদ রক্ষণাবেক্ষণের চেষ্টা চলছে।’

আবদুর রউফ জানান, কাজীপাড়া স্টেশন চালুর বিষয়ে গতকাল শুক্রবার ও আজ তিনিসহ কারিগরি দল ও জাপানি পরামর্শক কাজ করেছেন। তবে মিরপুর-১০ স্টেশন চালু করতে আরও কিছু সময় লাগবে। চেষ্টা থাকবে যথাসম্ভব দ্রুত চালু করা।
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের পুলিশ বক্সে গত ১৮ জুলাই অগ্নিসংযোগ করা হলে ওই দিন বিকেল ৫টায় মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরদিন মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। ২০ জুলাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিএমটিসিএলের তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক। মিরপুর ১০ স্টেশন ঘুরে দেখে ওই দিন গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিংয়ের সময় তিনি বলেন, ‘‌ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দুটি মেরামত করে পুনরায় চালু করতে এক বছরের মতো সময় লাগতে পারে।’

২৭ জুলাই তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটা এক বছরেও যন্ত্রপাতি এনে সচল করা সম্ভব হবে না।’
তখন ডিএমটিসিএলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন চালু করতে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার মতো খরচ করতে হবে। অবশ্য এখন সংস্থাটির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, দুটি স্টেশন মেরামতের ব্যয় ৫০ কোটি টাকা নাও ছাড়াতে পারে।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনের ক্ষয়ক্ষতি নতুন করে যাচাই করা হয়। এখনো মিরপুর-১০ স্টেশনে যাচাইয়ের কাজ চলছে। নতুন করে যাচাইয়ে মেরামত ব্যয় কমার ধারণা পেয়েছেন ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা।

দুটি স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ডিএমটিসিএল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে মূলত কম্পিউটার ও স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায় ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া যে কক্ষ থেকে ট্রেনের আসা-যাওয়া ও সংকেত ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হতো এবং চালকের সঙ্গে যোগাযোগ হতো, সেই কক্ষের কম্পিউটার ভাঙচুর করা হয়েছে। এর বাইরে সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা এবং কাচ ভাঙা হয়েছে।

মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে যাত্রীদের টিকিট কাটার জন্য দুই প্রান্তে ছয়টি মেশিন (ভেন্ডিং মেশিন) ছিল। এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আটটি কাউন্টারে ডিএমটিসিএলের কর্মীরা টিকিট বিক্রি করতেন, সেগুলোও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া স্টেশনের দুদিক থেকেই যাত্রীদের আসা-যাওয়ার ১৬টি স্বয়ংক্রিয় গেট ছিল। এগুলোতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় এমআরটি (ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট) পাস ও সাময়িক পাস স্পর্শ করলে ভাড়া কেটে রাখা হয়। এগুলোও নষ্ট করা হয়েছে।

কাজীপাড়া স্টেশনে চারটি ভেন্ডিং মেশিন, ছয়টি টিকিট কাটার কাউন্টার এবং ছয়টি আসা-যাওয়ার স্বয়ংক্রিয় গেট ভাঙচুর করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, আন্তর্জাতিক রীতি হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এসব যন্ত্র নতুন করে স্থাপন করতে হয়। মিরপুর-১০ নম্বরে যেসব যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর বেশির ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে বলে ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে। তবে আগের সরকারের সময় যেভাবে এক বছর লাগবে বলা হয়েছিল, তা ঠিক নয়। বড়জোর ৩-৪ মাস লাগতে পারে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।