ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কাজে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আগামী তিন মাসের মধ্যে জমা দিতে পারবে বলে আশা করছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
রাজধানীর পুরাতন হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজ রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর এ কথা বলেন।
গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে এক মাস সময় দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে এই সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। পরে ১৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আরও দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটরের কাছে আজ সাংবাদিকেরা চানতে চান, শেখ হাসিনার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হতে কেমন সময় লাগতে পারে? জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণ–অভ্যুত্থানের সময়ে হত্যাকাণ্ড, গত ১৬ বছরে গুম–ক্রসফায়ার, পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড—মোটাদাগে এই কয়েকটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এসেছে। শেখ হাসিনা, তাঁর মন্ত্রিসভা এবং বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। এর মধ্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার তদন্তপ্রক্রিয়া খুব জোরেশোরে চলছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তিন মাসের মধ্যে জমা দিতে পারবে, তবে এটা চূড়ান্ত কথা নয়। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা স্বাধীনভাবে তদন্ত করছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বলা যাবে তাঁর (শেখ হাসিনা) আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়াটা কখন শুরু হবে।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়লেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এখন পর্যন্ত একটি মামলা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ (লাল সতর্কতা) জারি করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) কাছে ১৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়। তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাকি ফরমালিটিস (আনুষ্ঠানিকতা) পূরণ করার দায়িত্ব এনসিবির। সুতরাং রেড নোটিশ ইন্টারপোল জারি করেছে কি না, সে বিষয়টা বলার দায়িত্ব হচ্ছে এনসিবি এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক কার্যালয়ের। আমরা এই খবর পরিষ্কারভাবে বলতে পারছি না যে তাদের মাধ্যমে এটা জারি হয়েছে কি না বা ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে এটা প্রকাশিত হয়েছে কি না।’
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে অপরাধী বহিঃসমর্পণ চুক্তি আছে, তার আওতায় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও জানান চিফ প্রসিকিউটর। তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা (চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়) তথ্যাদি প্রেরণ করেছি। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে কখন–কীভাবে (শেখ হাসিনাকে) চাইবেন বা ইতিমধ্যে চেয়েছেন কি না, এটা সরকার বলতে পারবে। আমাদের জানা নেই।’