‘শতবর্ষের ঢাকা’ শিরোনামে শিল্পী আল আখির সরকারের একক চিত্র প্রদর্শনী। গতকাল রাজধানীর লালমাটিয়ার শিল্পাঙ্গনে
‘শতবর্ষের ঢাকা’ শিরোনামে শিল্পী আল আখির সরকারের একক চিত্র প্রদর্শনী। গতকাল রাজধানীর লালমাটিয়ার শিল্পাঙ্গনে

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যময় স্থাপনা, উৎসব নিয়ে ‘শতবর্ষের ঢাকা’ নামে প্রদর্শনী শুরু

রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যময় স্থাপনা, উৎসব নিয়ে আঁকা ছবি দিয়ে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী ‘শতবর্ষের ঢাকা’। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর লালমাটিয়ায় ভূমি গ্যালারিতে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীতে আছে ভিক্টোরিয়া পার্কের লাল কাঠামো, শ্যামবাজারের সাকরাইন উৎসবের আকাশ, রূপলাল হাউসের ছাদ থেকে দেখা বুড়িগঙ্গা, নদীর ওপারের আড়ত বা বড় কাটরার স্কেচের মতো শতাধিক ছবি।

চারকোল থেকে বলপেন, রংতুলি থেকে মার্কার দিয়ে আঁকা এসব ছবি ‘স্মৃতির দিকে যাত্রা’ বলে উল্লেখ করলেন অতিথিরা। শিল্পী আল আখির সরকারের আঁকা ছবি নিয়ে এ প্রদর্শনী উৎসর্গ করা হয়েছে বরেণ্য সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রয়াত ফয়েজ আহ্‌মদকে।

‘শতবর্ষের ঢাকা’র উদ্বোধন করেন লেখক, গবেষক মফিদুল হক। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে পুরান ঢাকায় শহীদুল্লা কায়সারদের পরিবারের বসবাস, পঞ্চাশের দশকে সর্বজনপ্রিয় চিকিৎসক নন্দীর সেবাদান, নাজিমুদ্দিন রোডের ছাপাখানার স্মৃতিকথা।

গবেষক মফিদুল হক বলেন, ঢাকা চিনতে গেলেও পড়তে হয় ফয়েজ আহম্‌দের ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’। তেমনি কবিতায় এই ঢাকাকে তুলে এনেছিলেন কবি শামসুর রাহমান।

মফিদুল হক বলেন, ‘চার শ বছরের পুরান ঢাকার অনেক ইতিহাস নষ্ট হয়েছে, অনেক কিছু আমরা নষ্ট করছি। আমরা বাস করছি পরম্পরায় কিন্তু হতে চাইছি উন্মূল। অথচ এই ঢাকা সবাইকে গ্রহণ করে নেয়। সেই বেদনার কথা শিল্পী আখিরের ছবিতে আছে।’

স্বনামধন্য স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ বলেন, ‘বাজার অর্থনীতির স্বার্থের ফসল আজকের এই ঢাকা। ঐতিহ্য, সংস্কৃতি পদদলিত করে আমরা এগোচ্ছি। তবে আখিরের কাজ স্মৃতির গলি দিয়ে অতীতে নিয়ে যায়।’ তিনি বলেন, দুই কোটির বেশি মানুষ এই ঢাকায়। কিন্তু আখির মানুষ আকেননি। এঁকেছেন শতবর্ষের ঢাকা।

শিল্পী আখির নিজের ছবি প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন চারুকলায় পড়ার সময় পুরান ঢাকার প্রতি মুগ্ধতা, প্রয়াত ফয়েজ আহ্‌মদকে দেখার স্মৃতিকথাও। তিনি বলেন, ‘আমরা দিল্লি গেট চিনি কিন্তু “ঢাকা গেট” চিনি না। নতুন প্রজন্ম যেন তার ঐতিহ্যকে ভালোবাসে, পুরান ঢাকা, বুড়িগঙ্গাকে গর্বের বলে মনে করে, সেই ভাবনা মাথায় রেখেই কাজগুলো করা।’

শিল্পাঙ্গনের পক্ষে রুমি নোমান বলেন, পুরান ঢাকার স্মৃতিময় গল্প এই শিল্পীকেও স্পর্শ করেছে। ফয়েজ আহ্‌মদের জীবনের অনেকটা অংশ কেটেছে পুরান ঢাকায়। তিনি শিল্পীদের সঙ্গে ঢাকার যোগসূত্র তৈরি করেছিলেন। এ প্রদর্শনী উৎসর্গ করা হয়েছে ফয়েজ আহ্‌মদকে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনাকালে ভূমি গ্যালারির সাইফুর রহমান লেনিন বলেন, ‘ইতিহাসকে কালে কালে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন চিত্রকর, ভাস্কর্যশিল্পী ও ইতিহাসবিদেরা। শিল্পী আঁখির সেই কাজ করেছেন।’

প্রদর্শনী চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে দর্শকের জন্য।