কোটা সংস্কার আন্দোলন
কোটা সংস্কার আন্দোলন

চিকিৎসাধীন আরও ৫ জনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ১৮৭

সংঘর্ষে আরও ১৩ জন নিহতের খোঁজ পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন গতকাল সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নারায়ণগঞ্জে তিনজন গত শনিবার মারা যান, যাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে গতকাল। আর রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (মিটফোর্ড হাসপাতাল) গত শুক্রবার চারটি মরদেহ নেওয়া হয়েছিল বলে খবর পাওয়া যায়। এর বাইরে একজন পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর তথ্য গতকাল জানা যায়।

সব মিলিয়ে ছয় দিনে মোট ১৮৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। এখন পর্যন্ত মঙ্গলবার ৬, বৃহস্পতিবার ৪১, শুক্রবার ৭৯, শনিবার ৩৬, রোববার ২০ এবং সোমবার ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর এই হিসাব কিছু হাসপাতাল, মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে পাওয়া। সব হাসপাতালের চিত্র পাওয়া যায়নি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী, তরুণ ও নারী রয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগের শরীরে গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল। কারও কারও মৃত্যু হয়েছে আঘাতে।

সংঘর্ষে পুলিশের তিনজন সদস্য এবং তিনজন সাংবাদিকও মারা গেছেন। আহত অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনেকের চোখে রাবার বুলেট ও ছররা গুলি লেগেছে। কারও কারও চোখ আর ভালো না হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

আগুন দেওয়া ভবনে তিন মরদেহ

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে আগুন দেওয়া হাজি ইব্রাহিম খলিল শপিং কমপ্লেক্সের নয়তলা ভবনের দোতলায় একটি ব্যাংকের শাখা থেকে পোড়া তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। গতকাল দুপুরে তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিরা ব্যাংকের ভেতরে সাজসজ্জার (ইন্টেরিয়র ডিজাইন) কাজ করছিলেন। তাঁরা হলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ওহাব মণ্ডলের ছেলে সেলিম (২৯), একই জেলার মৃত সাবের বিশ্বাসের ছেলে আবদুস সালাম ও তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে সোহেল (৪২)।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, গত শনিবার সংঘর্ষের মধ্যে ভবনটিতে আগুন দেওয়া হয়। ওই দিন আগুনে পুড়ে এই তিনজনের মৃত্যু হয়।

  ঢাকায় ১০ মৃত্যুর খোঁজ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষে পুলিশ তিনজন সদস্য মারা গেছেন। এর মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একজন পরিদর্শক রয়েছেন।

নিহত তিনজনের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্যের খোঁজ আগেই পাওয়া গিয়েছিল। আরেকজনের পরিচয় জানতে যোগাযোগ করা হলে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নাম মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া। বনশ্রীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর তাঁকে আহত করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার তিনি মারা যান।

ঢাকা মেডিকেলে গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচজন মারা যান। তাঁরা হলেন রাসেল (২০), আজিজুল মিয়া, শান্ত (২২), রাজু (৩৬) ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। হাসপাতাল সূত্র জানায়, নিহতদের গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয়েছিল।

মিটফোর্ড হাসপাতালে গত শুক্রবার চারটি মরদেহ নেওয়া হয়। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চারটি মরদেহের মধ্যে দুটির সুরতহাল করতে দেননি স্বজনেরা। তাঁরা হাসপাতালের আনসার সদস্যদের মারধর করে মরদেহ নিয়ে গেছেন। বাকি দুজনের সুরতহাল করা হয়েছে।

হাসপাতালটির সূত্রে জানা যায়, নিহত দুজন হলেন রুহান (২০) ও অজ্ঞাত (৪০)। রুহানের বাড়ি চাঁদপুর সদর থানার বালিয়া গ্রামে। অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ পুলিশ সদস্য আবদুল কুদ্দুছ নিয়ে এসেছিলেন।