মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে কারা হেফাজতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসেও (জানুয়ারি) এ সংখ্যা ছিল ১৯। ফেব্রুয়ারি মাসে কারা হেফাজতে মৃত ১৯ ব্যক্তির মধ্যে ৯ জন কয়েদি ও ১০ জন হাজতি।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রতিবেদন দেয়। দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই এ প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনাই স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দেওয়া প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে ১ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনার ভিত্তিতে।
এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাতজন এবং গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, বগুড়া জেলা কারাগার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগার, নারায়ণগঞ্জ কারাগার, নোয়াখালী জেলা কারাগার, চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার, নওগাঁ জেলা কারাগার, ঝিনাইদহ জেলা কারাগার এবং মৌলভীবাজার কারাগারে একজন করে মারা যান।
এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রুবেল দের (৩৮) কারাগারে নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবার দাবি করেছে। অন্যদিকে বগুড়া জেলা কারাগারে ধর্ষণ মামলার হাজতি ইকবাল হোসেনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নারায়ণগঞ্জ বন্দরের স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি তুষার নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে একটি খালি ওয়ার্ডে প্রবেশ করে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন।
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি হেফাজতে মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’
সাংবাদিক নির্যাতন
এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের ৯টি ঘটনায় ১৩ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আহত ও আক্রমণের শিকার হয়েছেন ১০ জন এবং হুমকির সম্মুখীন ৩ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের সময় ছাত্র নামধারী ক্ষমতাসীন দলের বিবদমান কয়েক কর্মী সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে অশোভন আচরণ ও অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন। এ মাসের নয়টি ঘটনার তিনটি ক্ষমতাসীন দল, তিনটি ইউপি চেয়ারম্যান, দুটি ব্যবসায়ী ও একটি ঘটনায় সন্ত্রাসী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা ছিল।
ফেব্রুয়ারি মাসে সাইবার নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এসব হয়েছে নোয়াখালী, ময়মনসিংহ ও সিলেটে। মামলাগুলোয় নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মানবাধিকার পরিস্থিতি
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল আগের মতোই উদ্বেগজনক। দেশে রাজনৈতিক ও নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতনে মৃত্যু, পুলিশের ভুলের কারণে এক বৃদ্ধার মৃত্যু এবং অপতৎপরতার মতো ঘটনা ঘটেছে। সাইবার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মতামত প্রকাশের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মতো ঘটনা ঘটছেই। সীমান্ত হতাহতের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে, সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে, যা উদ্বেগজনক।