প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নিবন্ধন নবায়ন নেই ৩৬ হাজার চিকিৎসকের

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৩৬ হাজার চিকিৎসক নিবন্ধন নবায়ন ছাড়াই পেশা চর্চা করছেন। কত মানুষ ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন, তার সঠিক তথ্য নেই বিএমডিসির কাছে। আবার কোনো নিবন্ধন ছাড়াই কত মানুষ চিকিৎসক পরিচয়ে কাজ করছেন, তা–ও তারা জানে না।

রাজধানীর বিজয়নগরে বিএমডিসি কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় বিএমডিসির স্থায়ী স্বীকৃতি (প্রতিষ্ঠানের) প্রদান কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী ও বিএমডিসির রেজিস্ট্রার মো. লিয়াকত হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বিএমডিসির বর্তমান পরিস্থিতি সাংবাদিকদের জানানোর জন্য এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

বিএমডিসির সভাপতি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসকদের পেশাগত অসদাচরণ, চিকিৎসায় অবহেলা, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, চারিত্রিক দোষ—এসব নিয়ে অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত, শুনানি ও নিষ্পত্তি করা বিএমডিসির অতি জনগুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল কাজ। ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিএমডিসির কাছে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ১৪৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৭১টি অভিযোগের, ২৭টি অভিযোগের তদন্ত বা প্রতিবেদন লেখার কাজ চলছে এবং ৪৯টি অভিযোগ আনুষ্ঠানিক অনুমোদন প্রক্রিয়ায় আছে।

সভায় বিতরণ করা কাগজপত্রে দেখা যায়, ৭১টি নিষ্পত্তি হওয়া ঘটনার মধ্যে ১৭টি ঘটনায় ১৭ জন চিকিৎসককে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে বিএমডিসি। এর মধ্যে প্রথম আলোর একজন সাংবাদিককে হেনস্তা করার ঘটনায় একজন চিকিৎসকের নিবন্ধন স্থায়ীভাবে বাতিল করে বিএমডিসি। এ ছাড়া বাদী অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন ২০টি ঘটনায়, ২০টি ঘটনায় চিকিৎসককে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সতর্কতা নোটিশ ও ভর্ৎসনা করা হয় যথাক্রমে ৯ জন ও ৫ জন চিকিৎসককে।

চিকিৎসকদের নিবন্ধন দেওয়া ছাড়াও চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেওয়াও বিএমডিসির দায়িত্ব। একাধিক সাংবাদিক সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরে বলেন, কিছু বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মান খারাপ। প্রতিবছর ছলচাতুরী করে তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। এমবিবিএসে ভর্তির অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল করার চেষ্টা চালাচ্ছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিকদের সংগঠন।

বিএমডিসির কর্মকর্তারা বলেন, দেশে নিবন্ধিত চিকিৎসক ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৬৮ জন, দন্ত চিকিৎসক ১৪ হাজার ৩২৩ জন এবং চিকিৎসা সহকারী ২৯ হাজার ১৮ জন। চিকিৎসকদের মধ্যে ৩৬ হাজার চিকিৎসকের নিবন্ধন নবায়ন করা নেই। তাঁদের বড় অংশই জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিএমডিসির সভাপতি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ভুয়া চিকিৎসক দুই ধরনের। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন নিয়েছেন। বিএমডিসি তাঁদের শনাক্ত করতে পারবে। তবে বিএমডিসি থেকে কোনো নিবন্ধন না নিয়েই কেউ কেউ চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে মানুষের চিকিৎসা করছেন। তাঁদের শনাক্ত করা বিএমডিসির পক্ষে কঠিন। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানাতে পারি। সম্প্রতি কুমিল্লার একটি ঘটনায় আমরা এটা করেছি।’