দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

পূর্বাচলে শেখ হাসিনা পরিবারের ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দে অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে: দুদক

বোন শেখ রেহানাসহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের ছয় সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এ কথা জানান কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।

সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকেরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে আক্তার হোসেন বলেন, অনুসন্ধান চলছে, অনেক অগ্রগতি আছে। অনুসন্ধান দল এ নিয়ে অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। হাতে পর্যাপ্ত তথ্য এসেছে। বিশেষ করে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ-সংক্রান্ত বিষয়ে শিগগিরই ভালো কিছু তথ্য দিতে পারব।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও মামলা হতে পারে কি না জানতে চাইলে আক্তার হোসেন বলেন, এখনই এ বিষয়ে বলা যাবে না। তবে এ-সংক্রান্ত যে রেকর্ডপত্র পাওয়া গেছে, তাতে সুস্পষ্টভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণাদি রয়েছে।

একজন গৃহিণীরও দেড় শতাধিক ব্যাংক হিসাব

দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানান, ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খানের স্ত্রী ফেরদৌসী খান গৃহিণী হলেও তাঁকে কাগজপত্রে ব্যবসায়ী হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাঁর ১৫১টি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পাওয়া গেছে। যার মাধ্যমে ৭২ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া তিনি জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত ৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন করেন।

এ ছাড়া সাদেক খান সংসদ সদস্য থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অপরাধমূলক অসদাচরণের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত ৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার বেশি মূল্যের সম্পদ অর্জন করেন। তাঁর ২৯টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪৬৬ কোটি ৪৭ লাখ ৬২ হাজার টাকা বেশি মূল্যের অর্থের অস্বাভাবিক লেনদেন পাওয়া গেছে। সংসদ সদস্যের ছেলে ফাহিম সাদিক খানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ৭০টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৩৬ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় সাদিক খান, তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী ও ছেলে ফাহিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও মানি লন্ডারিং আইনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ধারায় পৃথক তিনটি মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তাকসিম খানের বিরুদ্ধেও মামলা

ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান ও ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে, অসৎ উদ্দেশ্যে, ব্যক্তিস্বার্থে ও ব্যক্তিগত লাভের জন্য ওয়াসার নিয়োগসংক্রান্ত আইন ও প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ না করে নিয়োগ প্রদানের অভিযোগে মামলা হয়েছে।

তাকসিমের বিরুদ্ধে আগে কোনো চাপের কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কি না জানতে চাইলে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমাদের রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করতে হয়। অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হয়। এ জন্য আমাদের সময় লেগেছে। কোনো চাপ ছিল না। দুদক চাপমুক্তভাবেই কাজ করে। নির্মোহ দৃষ্টি থেকেই সব অভিযোগের বিশ্লেষণ করে। এখানে ব্যক্তি মুখ্য নয়, অভিযোগই মুখ্য।’

আরও যেসব মামলা

দিনাজপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত ১২ কোটি টাকার বেশি সম্পদ অসাধু উপায়ে অর্জন করেন। তিনি নিজের ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ২৪টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেন। এ অপরাধে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী নাদিরা সুলতানা স্বামীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৭৪ লাখ টাকা বেশি মূল্যের সম্পদ অর্জন করেন। তাঁর বিরুদ্ধেও মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ ছাড়া ইউরো এশিয়া শিপিং লাইন, মেসার্স এমএ ট্রেডিং, গ্যালাক্সি রিসোর্স লিমিটেডের মালিক আব্দুল মান্নান পাটোয়ারির বিরুদ্ধে ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। মান্নানের স্ত্রী শিউলী আক্তারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বেশি মূল্যের সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়েছে।