এবার সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ হারালেন খন্দকার মোশাররফ

খন্দকার মোশাররফ হোসেন
খন্দকার মোশাররফ হোসেন

এবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ থেকেও বাদ পড়েছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ফরিদপুর-৩ আসনের এই সংসদ সদস্য দীর্ঘদিন ধরে সংসদের কার্যক্রমে অনুপস্থিত রয়েছেন। যে কারণে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক করা যাচ্ছিল না। এই সংসদীয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল গত বছরের ১৩ মার্চ।

এখন খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জায়গায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়েছে সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে। আজ রোববার জাতীয় সংসদে এই স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।

গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের পর গঠিত কমিটিতে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যের পদ থেকেও খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বাদ দেওয়া হয়।

স্থানীয় রাজনীতি থেকে নির্বাসিত হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় সংসদের কাজেও নিষ্ক্রিয় রয়েছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি সংসদ অধিবেশনে সর্বশেষ যোগ দিয়েছিলেন গত বছরের ৬ এপ্রিল। একসময় ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির এই নিয়ন্ত্রককে গত আড়াই বছরে নির্বাচনী এলাকায় দেখা গেছে মাত্র দুবার। তাঁর এই নিষ্ক্রিয়তায় সংসদীয় কমিটি যেমন অচল হয়ে পড়েছে, তেমনি নির্বাচনী এলাকার কিছু উন্নয়নকাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তিনি বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে আছেন।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ২০০৯ সালে তিনি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী হন। এরপর ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তাঁর অনুগতরা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার উন্নয়নকাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও জমি দখল করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন।

২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি এরপর স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য হন। তবে এবার তাঁকে কোনো মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়নি। তাঁকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা হয়।

ফরিদপুর আওয়ামী লীগের এক নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনায় করা একটি মামলার সূত্র ধরে ২০২০ সালের ৭ জুন রাতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে খন্দকার মোশাররফের অনুসারী আলোচিত দুই ভাই বরকত-রুবেল গ্রেপ্তার হন। এরপরই মূলত স্থানীয় রাজনীতি থেকে নির্বাসিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গত বছরের ৮ মার্চ অর্থ পাচার মামলায় মোশাররফের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর কিছুদিন পর থেকে জাতীয় সংসদের কাজেও পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন একসময়ের আলোচিত মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গত বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে তিনি সুইজারল্যান্ডে চলে যান।

একসময় ফরিদপুরের রাজনীতিতে প্রতাপশালী মোশাররফের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন, তাঁর অনুগত বরকত ও রুবেল এবং মোশাররফের ব্যক্তিগত সহকারী (তৎকালীন) এ এইচ এম ফোয়াদ এখন অর্থ পাচার মামলায় কারাগারে।

সংসদীয় কমিটিতে আরও পরিবর্তন

এদিকে মতিয়া চৌধুরীকে জাতীয় সংসদের উপনেতা করায় কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে কৃষি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। আগে এই সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন মতিয়া চৌধুরী।

এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়েছে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যকে।

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী সংসদীয় কমিটিগুলোতে এসব পরিবর্তনের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠ ভোটে পাস হয়।