বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটি বাঙালির জীবনে কেবল বর্ষ শুরুর সূচনাতেই সীমাবদ্ধ নয়, নতুন বছরের নতুন দিনটি উদ্যাপিত হয় সবচেয়ে বড় উৎসবের উপলক্ষ হিসেবে। ঋতুভিত্তিক এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবে অংশ নেন দেশের ধর্ম-বর্ণ-গোত্র, ধনী-গরিবনির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাভাষী মানুষেরাও সামর্থ্য অনুযায়ী নববর্ষ উদ্যাপন করেন।
বাঙালির প্রাণের উৎসবের দিনটিকে ঘিরে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের থাকে বর্ণাঢ্য আয়োজন। এ বছর তেমনই একটি উদ্যোগ নিয়েছিল এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েনশিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড। বাঙালি সংস্কৃতি তুলে ধরতে আয়োজিত হয়েছিল দেশের সবচেয়ে বড় আলপনা উৎসব ‘আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১’।
কোভিড-১৯-এর বৈশ্বিক মহামারির কারণে গত কয়েক বছর আলপনা উৎসব বন্ধ ছিল। বিরতির পর নবমবারের মতো দেশজুড়ে বৈশাখের মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিতে ঢাকাসহ দেশের তিনটি স্থানে আঁকা হয় ঐতিহ্যবাহী আলপনা। স্থানগুলো হলো ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, খুলনার শিববাড়ি মোড় এবং কিশোরগঞ্জের মিঠামইন।
খুলনার শিববাড়ি মোড় এবং রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ১৩ এপ্রিল শনিবার রাত পৌনে এগারোটায় শুরু হয় আলপনা আঁকা। চলে সকাল ছয়টা পর্যন্ত। রং আর তুলিতে বৈশাখ বরণের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে আলপনাশিল্পীদের পাশাপাশি অংশ নেন স্থানীয় সাধারণ মানুষেরাও। সবার চোখে-মুখে ছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে রাত নয়টা থেকে অংশগ্রহণকারীদের নাচ-গান-আবৃত্তির মাধ্যমে শুরু হয় আলপনা উৎসব। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অতিথিদের নিয়ে শুরু করেন আলপনা আঁকা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এশিয়াটিক থ্রি-সিক্সটির চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান নূরসহ দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা।
অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে হয়েছিল আলপনা আঁকার মহোৎসব। মিঠামইনের জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ‘অল ওয়েদার’ সড়কে ১৪ কিলোমিটারব্যাপী আলপনা আঁকা হয়। দীর্ঘ এ আলপনা যেমন বাংলার আবহমান সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছে, তেমনি বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের পাতায় স্থান পাবে বলে আশা করছেন আয়োজকেরা।
ছয় শতাধিক শিল্পী আর স্বেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণে করা হয় এ দীর্ঘ আলপনা। দিনে প্রখর রোদ থাকায় প্রায় তিন রাত ধরে বিকল্প আলোয় চলে আলপনা আঁকার মহাযজ্ঞ। যেটি নিয়ে হাওর অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে ছিল দারুণ উচ্ছ্বাস। হাওরের বুকে আঁকা আলপনা দেখতে আসেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকসহ স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যক্তিরা। তাঁরা প্রকাশ করেন নিজেদের ভালো লাগার কথা।
আয়োজনটি সম্পর্কে এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েনশিয়াল মার্কেটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরেশ যাকের বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে নতুন বছরের উদ্যমকে আরেকটু ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা ছিল আমাদের এই উৎসবে। আলপনাশিল্পী ও স্থানীয় লোকজনের সমন্বয় ছিল বলেই এত বড় আয়োজন সফলভাবে শেষ করা সম্ভব হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েনশিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলা নববর্ষ বরণ উৎসবের অংশ হিসেবে ‘আলপনায় বৈশাখ’ শীর্ষক আয়োজনটি করে আসছে।