আদালতকক্ষে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করার পর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির শাহ মো. মামুনের কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর নাজির শাহ মো. মামুনকে প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং পরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের এক কর্মচারী প্রথম আলোকে বলেন, বেলা একটার পর হঠাৎ কয়েকজন আইনজীবী নাজিরের কার্যালয়ে ঢুকে তাঁর চেয়ার ভাঙচুর করেন।
ঘটনার বিষয়ে নাজির শাহ মো. মামুন প্রথম আলোকে বলেন, একটি মামলার তথ্য নিতে তিনি আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে যান। তখন আদালতকক্ষে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা কামরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তিনি তাঁকে সালাম দেন। এরপর তিনি মামলাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে আবার নিজের কার্যালয়ে ফিরে আসেন। পরে বেলা একটার দিকে কয়েকজন আইনজীবী তাঁর কার্যালয়ে ভাঙচুর করেন। এ সময় তিনি তাঁর কার্যালয়ে ছিলেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নাজির শাহ মো. মামুন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সঙ্গে আদালতকক্ষে দেখা করেছেন। পাশাপাশি বিচারকেরা যে লিফট ব্যবহার করে ওপরে উঠেন, তিনি সেই লিফট ব্যবহার করে কামরুল ইসলামের ছেলেকে আদালতকক্ষে নিয়ে যান। কামরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর ছেলেকে দেখা করিয়ে দেন তিনি। এসব ঘটনা জানিয়ে সাধারণ আইনজীবীরা নাজিরের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম আরও বলেন, সাধারণ আইনজীবীদের কাছ থেকে এ ঘটনা জানার পর তিনিসহ অন্য আইনজীবীরা বিষয়টি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নজরে আনেন। আদালত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, দুপুরে কয়েকজন সাধারণ আইনজীবী নাজিরের সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় বিক্ষুব্ধ কেউ তাঁর চেয়ারটা ভাঙচুর করেন বলে জানতে পেরেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বেলা একটার দিকে তিনি আদালতে অবস্থান করছিলেন। তখন কয়েকজন আইনজীবী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের কাছে অভিযোগ করেন, নাজির ইচ্ছা করে হত্যা মামলার আসামি কামরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। আদালত আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নাজির শাহ মো. মামুন দাবি করেন, তিনি ইচ্ছা করে কামরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে যাননি। কামরুল ইসলামের ছেলের সঙ্গে তাঁর আগে থেকে পরিচয়ও ছিল না। তিনি বিচারকদের লিফট ব্যবহার করে কাউকে আদালতে নিয়ে যাননি।
দুপুরের পর তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শাহ মো. মামুন বলেন, ‘আমি দুপুরের পর আর কার্যালয়ে যাইনি।’ এর পরে শাহ মো. মামুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজিরের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।