‘আমরা তো কোনো কিছুতে নেই, তবু ভাই হাসপাতালে...’

‘আমার ভাই বাসায় ভাত খেয়ে কাজে যাচ্ছিল। মুরাদপুরে একটা গ্যারেজে কাজ শিখছে সে। যাওয়ার পথে একটা গুলি এসে তার পেটে লাগে। আমরা তো কোনো কিছুতেই নেই। তবু আজ ভাইকে হাসপাতালে কাতরাতে হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ভাইয়ের শয্যাপাশে বসে আজ বুধবার সকালে এ কথা বলেন শারমিন আকতার। তাঁর ছোট ভাই মো. আকাশ গতকাল মঙ্গলবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন। ১৮ বছরের এই তরুণের পেটে গুলি লেগেছে। গুলি লাগার পর তাঁকে তাঁর গ্যারেজের লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যান।

আকাশদের বাসা নগরের আতুরার ডিপো এলাকায়। সেখান থেকে দুপুরে ভাত খেয়ে কর্মস্থলে ফিরছিলেন তিনি। পথে তিনি সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান।

শারমিন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। পেটের দায়ে ভাইটি গ্যারেজের কাজ শিখছে। এখন সে আহত হয়ে পড়ে আছে। এখনো মুখে কোনো খাবার দিচ্ছে না। জানি না কত দিন এভাবে থাকতে হবে।’

চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় গতকাল বিকেলের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ৮০ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পথচারীও রয়েছেন।

মো. ফারুক (৩২) নামের ওই পথচারী মুরাদপুরের একটি আসবাব কারখানায় কাজ করতেন। কর্মস্থল থেকে চা খেতে বের হয়ে তিনি বুকে গুলিবিদ্ধ হন। পরে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর স্ত্রী সীমা আকতারেরও প্রশ্ন ছিল, ‘আমাদের কী দোষ?’
এভাবে অনেক পথচারী গতকাল সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে আহত হয়েছেন।

নাইক্ষ্যাংছড়ি থেকে চট্টগ্রামে এসেছিল কিশোর ইমাম ফখরুদ্দিন। গতকাল সে নগরের খুলশী এলাকায় তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিল। অষ্টম শ্রেণির এই ছাত্র মুরাদপুরে মারধরের শিকার হয়।

তাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। পরে মুরাদপুর থেকে ফখরুদ্দিনকে কয়েকজন হাসপাতালে নিয়ে আসে।

রাত ১০টায় চমেকের জরুরি বিভাগে ফখরুদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফখরুদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মারধরের সময় মুঠোফোন খোয়া যাওয়ায় এই কিশোর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। তার কাছে টাকাও নেই। দিশেহারা ফখরুদ্দিনকে চমেক পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

‘আমরা গরিব মানুষ। পেটের দায়ে ভাইটি গ্যারেজের কাজ শিখছে। এখন সে আহত হয়ে পড়ে আছে। এখনো মুখে কোনো খাবার দিচ্ছে না। জানি না কত দিন এভাবে থাকতে হবে।’
—শারমিন আকতার, চট্টগ্রামে আহত তরুণের বোন

ফখরুদ্দিন বলে, ‘সংঘর্ষ যখন চলে, তখন আমি হেঁটে হেঁটে মুরাদপুর পার হচ্ছিলাম। এ সময় আমাকে ধরে মারধর করা হয়। ঘুষি মারে। লাঠি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়।’

কোন পক্ষ মেরেছে? এমন প্রশ্নে ফখরুদ্দিন প্রথম আলোকে বলে, ‘আমি জানি না কোন পক্ষের হাতে মার খেয়েছি। মারার পর আমার ফোনটাও নিয়ে গেছে। এখন কীভাবে বাড়িতে যাব, জানি না।’

ফখরুদ্দিনকে বাড়িতে পাঠাতে হাসপাতাল পুলিশের পক্ষ থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় যোগাযোগ করা হয়। থানা পুলিশ তার বাড়িতে খবর দিয়েছে বলে জানা গেছে।