বাংলাদেশের জন্য যা ভালো, তার পক্ষে দাঁড়ান

দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গতকাল। ২০২০ সালের ১ জুলাই তিনি মারা যান। প্রথম আলোর ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছিলেন লতিফুর রহমান। ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর তাঁর দেওয়া সেই বক্তব্যে উঠে এসেছে প্রথম আলোর মূল্যবোধ ও ভবিষ্যতের কথা।

প্রথম আলোর ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন লতিফুর রহমান

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আসসালামু আলাইকুম। প্রথমত, প্রথম আলোর ১৮তম বার্ষিকীতে সবাইকে অভিনন্দন। ১৮-এর মাইলফলক ছোঁয়ার জন্য সবাইকে হৃদয় থেকে অভিবাদন। ১৮ কিন্তু একটা মাইলফলক। সত্যি বলতে গেলে আমি আগে এ রকম চিন্তা করিনি। কিন্তু এই ১৮ বছরকে থিম হিসেবে নেওয়া, এটা ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সাথে খুব সুন্দরভাবে মিলে গেছে।

প্রথম আলো শুরু থেকে যে তরুণদের বিষয়গুলো তুলে ধরে এসেছে, এবারের স্লোগান তাকে প্রতিফলিত করেছে। একেবারে প্রথম থেকে ইয়ুথ ওরিয়েন্টেশনটা কিন্তু প্রথম আলোর হলমার্ক ছিল। আর সম্ভবত ওই জন্য প্রথম আলো দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সাথে সাথে দেশের এই তরুণেরা প্রথম আলোর অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেদিক দিয়ে দেখলে বাংলাদেশও একটি তরুণ দেশ। তাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে তরুণদের সমর্থন ও তাঁদের চিন্তাভাবনাকে সঙ্গে নেওয়া প্রয়োজন। প্রথম আলো এটা চমৎকারভাবে করেছে।

এই ১৮ বছরে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্নভাবে চাপের মধ্যে প্রথম আলো উঠে এসেছে। আমার নাতি ফারাজ (হোলি আর্টিজানে নৃশংস জঙ্গি হামলায় নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেন)। ১৫ এপ্রিল (২০১৬) তারিখে তার ২০ বছর হলো। এই বয়সে ও যেটা করল, যেটা দেখাল, সেটা সাহস, সেটা মূল্যবোধ, সেটা যা সঠিক তার পক্ষে দাঁড়ানো, সেটা মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো। এ ক্ষেত্রে কে কোন ধর্মের, কে কোন ভাষার, কে কোথাকার, তা মাথায় নেয়নি সে। মানুষ মানুষই। অতীতে প্রথম আলো এটার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আগামী দিনেও এর পক্ষেই দাঁড়াবে। অনেক সময় এভাবে সোচ্চার হওয়াটা জনপ্রিয়তা না-ও পেতে পারে, ক্ষমতায় থাকা লোকজন সেটা পছন্দ না-ও করতে পারেন। কিন্তু প্রথম আলো যা ঠিক তা আগে করেছে, এখন করবে; আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও করে যাবে। একই নীতি ও মূল্যবোধ, আমি অবাক হয়ে যাই যে আমি দেখলাম, ফারাজ করল। সে কিন্তু এত রকম দার্শনিকের মতো কথা চিন্তা করেনি নিশ্চয়ই। সে করেছে, যেটা তার মন বলেছে। তার মন যেটাকে ঠিক বলেছে। এর পরিণতি নিয়ে ভাবেনি।

আর প্রথম আলো সফলতা পেয়েছে, আপনারা সফলতা পেয়েছেন; কারণ, আপনারা একইভাবে কাজ করেছেন। নিজেকে ভালো রাখার জন্য কারও অধীনে নিজেকে সঁপে দেওয়া অনেক সহজ। তবে দেশের পক্ষে দাঁড়ায়, দেশের নাগরিকদের পক্ষে দাঁড়ায়—এমন একটি গণমাধ্যমের কাছে এটা প্রত্যাশিত নয়। ১ জুলাই ফারাজ যে কাজ করেছে, যে আত্মত্যাগ করেছে, আর প্রথম আলোর এই ১৮ বছরের যাত্রা—অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে যে একটা বড় মিল আছে। মিল আছে কেন? দুটোরই ভিত্তি মূল্যবোধ, দুটোরই ভিত্তি মানবতা, দুটোরই ভিত্তি মানুষ হিসেবে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা।

প্রথম আলো অনেক ঝড়ঝাপটার মধ্য দিয়ে গিয়েছে, আজকেও চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। কেন? আপনারা যা ঠিক, তার পক্ষে দাঁড়ান, সমাজের জন্য যা ভালো, তার পক্ষে দাঁড়ান, মানবতার জন্য যা ভালো, তার পক্ষে দাঁড়ান, বাংলাদেশের জন্য যা ভালো, তার পক্ষে দাঁড়ান। ১৮ বছর একটা মাইলফলক। ইনশা আল্লাহ প্রথম আলো একদিন ১০০ বছর উদ্‌যাপন করবে। আজ আপনারা যে মূল্যবোধ নিয়ে চলছেন, সেটাকেই প্রথম আলোর ভিত্তি হিসেবে ধরে রাখতে হবে। আর আমার কোনো সন্দেহ নেই যে প্রথম আলোর একটা অসাধারণ দল, অসাধারণ নেতৃত্ব রয়েছে। এই ১৮ বছরে প্রথম আলো এখানে এমনি এমনি আসেনি। এসেছে আপনাদের প্রত্যেকের আত্মত্যাগ, প্রতিশ্রুতি ও মূল্যবোধের কারণে। মতি ভাই যে নেতৃত্ব, যে প্রতিশ্রুতি, যে মূল্যবোধ দিয়ে প্রথম আলোকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন, তার জন্য মতি ভাইকে ধন্যবাদ বলাও খুব কম হবে। কিন্তু বলতে হবে, মতি ভাই আপনাকে, আপনার দল, আপনার নেতৃত্বদানকারী দল এবং কর্মী যাঁরা এখানে আছেন এবং এখানে নেই, সবাইকে অভিনন্দন এবং হৃদয়ের গভীর থেকে অভিবাদন।

আজ ফারাজকে যে সম্মান আপনারা দিলেন, তার জন্য আমার পক্ষ থেকে, আমার পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ। আপনারা সবাই যেন ব্যক্তিগতভাবে সুখে থাকেন, সফল হন, সুস্থ থাকেন সেই আশা করি। সব ক্ষেত্রে প্রথম আলোর সফলতা কামনা করি।

(কিছুটা পরিমার্জিত ও সংক্ষেপিত)