পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার পর্যটক যান সেন্ট মার্টিন দ্বীপে
পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার পর্যটক যান সেন্ট মার্টিন দ্বীপে

সেন্ট মার্টিন নিয়ে দুই মন্ত্রণালয় দুই পথে

পরিবেশ মন্ত্রণালয় চায় পর্যটক নিয়ন্ত্রণ করে দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে। পর্যটক কমানোর বিপক্ষে পর্যটন মন্ত্রণালয়।

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন রক্ষার পদক্ষেপের ক্ষেত্রে দুই মন্ত্রণালয় দুই রকম অবস্থান নিয়েছে। দ্বীপটিতে পর্যটকের সংখ্যা সীমিত করতে চায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে পর্যটন মন্ত্রণালয় এর বিপক্ষে।

দুই মন্ত্রণালয়ের দুই রকম অবস্থান উঠে আসে গতকাল রোববার এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায়। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জৈববৈচিত্র্য রক্ষায় তৈরি করা নির্দেশিকার ওপর মতামত দিতে ভার্চ্যুয়ালি এই সভা ডাকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়।

সভা সূত্র জানায়, সভাটি শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য ছাড়াই শেষ হয়। আবার বিষয়টি নিয়ে সভা হবে। যদিও প্রায় দুই বছর আগে এই নির্দেশিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে। এ নিয়ে তিনটি বৈঠক হয়েছে। খসড়া চূড়ান্ত হয়নি।

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে দ্বীপটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করে। সর্বশেষ গত ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সেন্ট মার্টিন দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

অবশ্য অবৈধভাবে হোটেল-রিসোর্ট নির্মাণ এবং অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে দ্বীপটির জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, যা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন সময় দ্বীপে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের কথা বলছে। তবে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এবার খসড়া নির্দেশিকায় পর্যটন নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্বীপে যাওয়ার আগে অনলাইনে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা এবং নির্দিষ্ট সংখ্যার পর নিবন্ধন বন্ধ করা, রাতের বেলায় দ্বীপে পর্যটকদের থাকা নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকটি হয়। এর আগে দুটি বৈঠক হয়েছে।

অবশ্য সেন্ট মার্টিনে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে একমত নন পর্যটন মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীরা। তাঁরা মনে করেন, পর্যটক সীমিত করলে পর্যটনের পথ সংকুচিত হবে।

জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে যেমন বাঁচিয়ে রাখতে হবে, তেমনি পর্যটকদের দিকও দেখতে হবে। পর্যটকদের জন্য বিকল্প দর্শনীয় স্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে মহেশখালী, সোনাদিয়া ও মাতারবাড়িকে পর্যটনস্থান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিনে পর্যটক বন্ধ না করে বিকল্প ব্যবস্থার ওপর নজর দিতে হবে।

আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ সভাপতিত্ব করেন।

ফারহিনা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সেখানে পর্যটক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নির্দেশিকায় এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।

বৈঠকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে গড়ে ওঠা অবৈধ হোটেল-রিসোর্টের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর বিষয়েও আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, বিষয়টি জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব বলে মত দেওয়া হয়। তখন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের পক্ষে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা কঠিন।

জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থায়ী জনবল রাখা, যাতে তাঁরা প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করতে পারেন।’

বৈঠকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কুকুরের উপদ্রব নিয়েও আলোচনা হয়। এতে বলা হয়, কুকুর কচ্ছপের ডিম খেয়ে ফেলে, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। পর্যটকদেরও বিরক্তির কারণ হচ্ছে কুকুর। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে কুকুর কীভাবে সরানো যায়, সে দায়িত্ব দেওয়া হয় টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনকে। বৈঠকে সেন্ট মার্টিনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অপরিচ্ছন্নতা নিয়েও আলোচনা হয়। কিন্তু কার কী দায়িত্ব হবে, তা ঠিক হয়নি।

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘কুকুরের উপদ্রব কমাতে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে আমরা শিগগিরই কাজ শুরু করব।’

অবশ্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপ রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, এ ধরনের বৈঠক বহু হয়েছে। দ্বীপটির বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দ্বিমত থাকায় দিন দিন জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বেড়েই চলছে।