পোকার আক্রমণে কক্সবাজারের মহেশখালীর উপকূলে বন বিভাগের সৃজিত প্যারাবন বিবর্ণ হয়ে গেছে। এক সপ্তাহ ধরে উপকূলের বিভিন্ন স্থানে প্যারাবনে পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এতে বাইনগাছের পাতা ও ডালপালা শুকিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অন্তত দুই হাজার একর প্যারাবন শুকিয়ে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।
উপকূলীয় বন বিভাগের গোরকঘাটা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালীর উপকূলে গোরকঘাটা, চরপাড়া, মহেশখালী জেটিসংলগ্ন এলাকা, বড়দিয়া, পোকখালী, ঘটিভাঙ্গা, কালারমারছড়ার ঝাপুয়া ও মাতারবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় ১৭ হাজার একর বাইনগাছের সৃজিত প্যারাবন রয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ মহেশখালী জেটিঘাট, আদিনাথ জেটি, পোকখালীসহ বিভিন্ন স্থানে বাইনগাছে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত বনভূমির আয়তন প্রায় দুই হাজার একর।
গত রোববার মহেশখালী আদিনাথ জেটি, ঘটিভাঙ্গা, মহেশখালী জেটিসংলগ্ন এলাকা, পোকখালীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন বিভাগের সৃজিত প্যারাবনে পোকার আক্রমণ প্রকট আকার ধারণ করেছে। সারি সারি বাইনগাছ শুকিয়ে গেছে, ঝরে গেছে পাতা।
স্থানীয় গোরকঘাটা এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলম, আমির হোসেন ও আমজাদ হোসেন বলেন, উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করার জন্য উপকূলে প্যারাবন সৃজন করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি প্রকার আক্রমণে প্যারাবন হুমকির মুখে পড়েছে। গাছ মরে গেলে উপকূলীয় প্রতিরক্ষা থাকবে না। ঝড়ের কবলে পড়বে মানুষ।
প্যারাবনে পোকা আক্রমণের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বেলায়েত হোসেন ও সহকারী বনসংরক্ষক শেখ আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি দল গত শনিবার মহেশখালীতে আসে। পরে ওই প্রতিনিধিদল মহেশখালী জেটিঘাট, আদিনাথ জেটি ও পোকখালী এলাকায় সৃজিত প্যারাবনে ঘুরে দেখে।
জানতে চাইলে উপকূলীয় বন বিভাগের গোরকঘাটার রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আইয়ুব আলী বলেন, এক সপ্তাহ ধরে প্যারাবনে পোকার আক্রমণ হচ্ছে। এতে ১৭ হাজার একর প্যারাবনের মধ্যে অন্তত ২ হাজার একর সৃজিত প্যারাবন বিবর্ণ হয়ে পড়েছে।
মোহাম্মদ আইয়ুব আলী বলেন, দুই থেকে তিন বছর পরপর প্যারাবনে পোকার আক্রমণ হয়। এবারের মতো প্যারাবনে পোকার আক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করেনি। তবে বৃষ্টি হলে নতুন করে বাগানে পাতা গজাবে। তাই পোকার আক্রমণে প্যারাবনের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হবে না বলে তিনি জানান।
জানতে চাইলে ডিএফও বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘গত শনিবার প্যারাবন দেখতে গিয়েছিলাম। প্যারাবনে পোকার আক্রমণের দৃশ্য চোখে পড়েছে। কিন্তু এতে প্যারাবনের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। পোকার আক্রমণে বাগান মরে যাচ্ছে মনে হলেও আসলে তা হচ্ছে না। বৃষ্টি হলে আবার প্যারাবনে নতুন করে পাতা গজাবে।’