বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দেশের সব বিভাগে দমকা হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে অতিবৃষ্টির কারণে ভূমিধসের আশঙ্কার কথাও বলা হয়েছে।
আজ রোববার ঘূর্ণিঝড় রিমাল নিয়ে ১১ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ির পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
ইতিমধ্যে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে পাহাড়ধসের বিষয়ে সতর্ক করতে মাইকিং শুরু হয়েছে। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান আজ প্রথম আলোকে বলেন, ভূমিধসের আশঙ্কার কথা আমরা জেনেছি। ইতিমধ্যে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাও হয়েছে। ইতিমধ্যে মাইকিং শুরু হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।
রাঙামাটি শহরে ২৯টিসহ জেলায় মোট ৩২২টি আশ্রয়কেন্দ্র আছে বলে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পরিস্থিতি খারাপ হলে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষকে নিয়ে আসা হবে। আসলে টানা বৃষ্টি হলেই পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দেয়।
পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ধস হয় বেশি বৃষ্টি হলে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১২ থেকে ১৩ জুন পার্বত্য তিন জেলাসহ ছয় জেলায় পাহাড়ধসে ১৬৮ জন নিহত হন। ১৩ জুন পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে নিহত হন ১২০ জন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে পাহাড়ধসে এত প্রাণহানি আগে হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোর বাইরে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পাহাড়ধসের ঝুঁকি আছে। কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আছেন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোর মধ্যে ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর শিবিরে পাহাড়ধসের আশঙ্কা বেশি। এখানে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা আছেন। তবে তাঁদের সবাইকে সরিয়ে নেওয়ার দরকার নেই। টানা বৃষ্টি হলে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি আসবে। সে প্রস্তুতি তাঁদের আছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ পূর্বাভাসে বলেছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়া রিমালের প্রভাবে দেশের ১৬ জেলায় ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
ইতিমধ্যে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ রোববার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে রিমাল বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল আজ সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের কাছের এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।