রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তেলের মান, ব্যবহারের উপযোগিতা, দাম, আনার খরচসহ বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করে দেখছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে এক দফা বৈঠকে প্রাথমিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে তেলের নমুনা এখন পর্যন্ত পরীক্ষাগারে পৌঁছায়নি।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং বিপিসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তাঁদের তথ্যমতে, ইতিমধ্যে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেলের নমুনা ঢাকা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে। সেখান থেকে নমুনা নিয়ে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার শীর্ষ তেল কোম্পানি রোজনেফট পরিশোধিত তেল আনার যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা আসলে পুরোপুরি পরিশোধিত নয়। ব্যবহারের জন্য এটি আবার পরিশোধন করতে হবে। নমুনা পরীক্ষার পর বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপর দাম ও অন্যান্য খরচ নিয়ে আলোচনা হবে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি তেল আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। বিপিসির কাছ থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড বর্তমানে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত থেকে আনা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) শোধন করে ডিজেল, পেট্রল, অকটেনসহ বিভিন্ন রকম জ্বালানি তেল উৎপাদন করে। বছরে ১৫ লাখ টন তেল শোধনের সক্ষমতা আছে তাদের। এ থেকে বছরে ৬ লাখ টন ডিজেল পাওয়া যায়। আর দেশে ডিজেলের চাহিদা বছরে ৪৬ লাখ টনের মতো। মোট জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশই ডিজেল। তাই কম দামে ডিজেল কেনায় আগ্রহ আছে সরকারের।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত, চীনসহ কোনো কোনো দেশ রাশিয়া থেকে কম দামে জ্বালানি তেল কেনা শুরু করে। গত মে মাসে বাংলাদেশকেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। তবে বাংলাদেশের আগ্রহ পরিশোধিত জ্বালানি তেল নিয়ে, যা সরবরাহে সম্প্রতি একটি প্রস্তাব দিয়েছে মস্কো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির দুজন কর্মকর্তা জানান, রাশিয়ার জ্বালানি তেলের বৈশিষ্ট্য বলছে, এটি দেশে ব্যবহারের উপযোগী নয়। এতে সালফারের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই ব্যবহার করতে হলে পরিশোধন করার প্রয়োজন হবে। এতে খরচ বেড়ে যাবে। নমুনা পরীক্ষার পর বিষয়টি পরিষ্কার হবে।