উন্নয়নের সুফলগুলো দুর্নীতির চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছে: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান দুর্নীতি ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ-গঠন সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্য’ শীর্ষক ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ৮ জুলাই
ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতিবাজকে বর্জন করা না হলে কখনোই দুর্নীতির গভীর ক্ষত সেরে উঠবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বলেছেন, দুর্নীতিবাজ বাবাকে, দুর্নীতিবাজ স্বামী বা স্ত্রীকে, দুর্নীতিবাজ সহকর্মীকে একঘরে করা না গেলে এ রোগের উপশম হবে না। উন্নয়নের সুফলগুলো দুর্নীতির চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘দুর্নীতি ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ–গঠন সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্য’ শীর্ষক ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আজ সোমবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘কেবল আইন দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হয় না, দুর্নীতিরও হয় না। এ জন্য দরকার সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন।…তরুণদের প্রশ্ন করতে হবে, তাঁদের পিতা–মাতার অর্জিত অর্থটা ন্যায়সংগত পথে এসেছে তো? স্ত্রীদের কৌতূহল থাকতে হবে, স্বামীর বিত্তবৈভবে অবৈধ অর্থের অংশ নেই তো? বন্ধু–পরিজনদের সচেতন হতে হবে, নিকটজনের উপার্জনটা সঠিক নিয়মে হচ্ছে তো? এটাই সামাজিক সচেতনতার প্রথম ধাপ।’ তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ বাবাকে, দুর্নীতিবাজ স্বামী বা স্ত্রীকে, দুর্নীতিবাজ সহকর্মীকে একঘরে করা না গেলে, বর্জন না করা হলে কখনোই দুর্নীতির গভীর ক্ষত সেরে উঠবে না, এ রোগের উপশম হবে না।

 অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক হারুন–অর–রশীদ। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান।

এগিয়ে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘শিক্ষা, জীবনমান উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ গঠন থেকে শুরু করে সামাজিক সুরক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব—এ রকম নানা মাত্রায় আমরা অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছি, নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে চলেছি। কিন্তু একই সঙ্গে স্বীকার করতে হবে, দুর্নীতির মতো অতলবিস্তৃত ব্যাধি থেকে আমরা পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের সুফলগুলো দুর্নীতির চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছে, আমাদের উজ্জ্বল অর্জনগুলো দুর্নীতির অন্ধকারে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এ দুর্নীতি আমাদের জন্য একদিকে যেমন কলঙ্কের, অপমানের, তেমনি বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়, আমাদের সুবিচারবোধের উন্মেষের পথে বৃহত্তম প্রতিবন্ধক।’

গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে জবাবদিহি

দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাস্তবতায় আইনের কঠোর প্রয়োগ সময়ের দাবি উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সুবিবেচনার সুযোগ এতে নেই বললেই চলে। গণতন্ত্রের অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে জবাবদিহি। সুতরাং রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করে পরিচালনাকাঠামো গড়ে তোলা হলে দুর্নীতি এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।

পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতি

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান শিক্ষার হারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতিও। এ ত্রুটি শিক্ষার নয়, এ ত্রুটি আমাদের শিখনপ্রক্রিয়ায়, শিক্ষার প্রতি আমাদের মনোভাবের। শিক্ষা যদি হয় কেবল চাকরি পাওয়ার অনুঘটক, তাহলে সেটা শিক্ষা নয়, শিক্ষার নামে প্রহসন।’ তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয়, আমাদের তরুণসমাজের একটা বিরাট অংশের মধ্যে আমরা এখনো শিক্ষর সঠিক বোধ সঞ্চারিত করতে পারিনি, সততার মুকুট নিয়ে বেঁচে থাকা শেখাতে পারিনি, অল্পে তুষ্ট থেকে সাধারণ জীবনযাপনের মাহাত্ম্য শেখাতে পারিনি।’