ভোটের সময় ইন্টারনেটের গতি কমালে নির্বাচন বিতর্কিত হবে: সিইসি

নির্বাচনের দিন সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের জন্য সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন নিয়ে আজ সোমবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিইসি
ছবি: নির্বাচন কমিশন সচিবালয়

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনের সময় অপকৌশল হিসেবে ইন্টারনেটের গতি ধীর করে দেওয়া হলে তা নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত করবে। এটা সরকারের অনুধাবন করা উচিত।

নির্বাচনের দিন সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের জন্য সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন নিয়ে আজ সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সিইসি এই মন্তব্য করেন। নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময়ে নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টাস ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সদস্যরা অংশ নেন।

ভোটের দিন সারা দেশে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের গতি ধীর করে দেওয়া হয়, এতে সংবাদ পরিবেশনে সমস্যা তৈরি হয়। সাংবাদিকদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি আরও বলেন, এটা (গতি ধীর) নির্বাচন কমিশন করে, না সরকার করে, না কোনো মন্ত্রণালয় করে—তা তিনি জানেন না। তবে সরকার যদি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিশ্বাস করে, যে–ই এটি করে থাকুক, নির্বাচনের দিন এই জিনিসগুলো না করলেই বোধ হয় ভালো হবে। কেননা, এতে সন্দেহের উদ্রেক হবে। অনেকেই ভাববেন, অপকর্মের জন্যই এটা করা হয়েছে।

গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, অবাধ বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহের সুযোগ থাকলে স্বচ্ছতা অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়। তথ্য সংগ্রহে সংবাদকর্মীদের বাধা দেওয়া হলে তাঁদের মনে হবে, ‘ডাল ম্যা কুচ কালা হ্যায়’। তিনি বিশ্বাস করেন, স্বচ্ছতা লাগবে।

সিইসি বলেন, ‘স্বচ্ছতা না হলে আমরা আবারও গত নির্বাচন যেভাবে বিতর্কিত হয়েছে, হয়তো পুরোপুরি সত্য নয়, সবকিছু অসত্য হতে পারে, কিন্তু একটা পাবলিক পারসেপশন আছে..., স্বচ্ছতার অভাবের কারণেই সেটা হয়ে থাকতে পারে। কাজেই স্বচ্ছতার বিষয়টাতে আমাদের জোর দিতে হবে।’

বর্তমান কমিশন কোনোভাবেই সাংবাদিকদের বিপক্ষে নয় উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘গণমাধ্যমের বিপক্ষে কখনোই আমাদের অবস্থান নয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদি গণমাধ্যমের কর্মকাণ্ডকে সার্বিক স্বার্থে, জনস্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হয়, সেই জিনিসগুলো আমরা দেখব।’

নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে সহায়ক হবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘যতটুকু ক্ষমতা আমরা গণমাধ্যমকে দেব, সেটা যেন তারা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য হয়তো কমিশন একমত হবে। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বিষয়গুলো দেখব।’ তিনি বলেন, গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমের দ্বারা স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হলে নির্বাচন কমিশনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকার সুযোগ বেড়ে যাবে।

এ সময় বিভিন্ন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাংবাদিকেরা বলেন, নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের নির্বাচনের খবর সংগ্রহে আলাদা পাস দেন। কিন্তু এরপরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশ সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয়। আবার প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করে বা তাঁর অনুমতি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে সংবাদ সংগ্রহ করার কথা বলা হয়। এতে সমস্যা তৈরি হয়। কারণ, কোনো ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম ঘটতে থাকলে সে সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিশ্চয় কোনো সাংবাদিককে ভোটকক্ষে যাওয়ার অনুমতি দিতে চাইবেন না।

এর জবাবে পুলিশের বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন অনুমতি দেওয়ার পরেও পুলিশ ঢুকতে না দিলে সিরিয়াসলি নিতে হবে আমাদের।’

মতবিনিময়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সিইসি ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান, ইসি সচিব জাহাংগীর আলম অংশ নেন।