প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল করার দাবি করেছে। তারা বলছে, এমন ব্যবস্থা করতে হবে যেন অভিভাবকেরা তাঁদের পছন্দের মেডিকেল কলেজে সন্তানদের ভর্তি করাতে পারেন। তবে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, মেডিকেল শিক্ষার মান নিশ্চিত করা জরুরি।
আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বেসরকারি স্বাস্থ্যশিক্ষার মানোন্নয়ন এবং ভর্তিপ্রক্রিয়ায় চলমান শিক্ষার্থীসংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও কলেজের মালিকপক্ষ এসব কথা বলেন। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জোট প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।
শুরুতে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খান বলেন, ভর্তির ক্ষেত্রে অটোমেশন পদ্ধতি চালুর কারণে বেসরকারি মেডিকেলে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ১ হাজার ২০০ আসন খালি আছে, শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারছে না। এই পদ্ধতির কারণে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো এখন ধ্বংসের মুখে।
প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, অভিভাবকেরা টাকা দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াবেন। তাঁরা যেখানে চাইবেন, যে মেডিকেল কলেজ পছন্দ, সেখানেই তাঁদের ছেলেমেয়েদের ভর্তির সুযোগ থাকতে হবে।
অটোমেশন পদ্ধতিতে মেধার ওপর ভিত্তি করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। মেধাতালিকায় ওপরের দিকে থাকা শিক্ষার্থীরা আগে তাঁদের পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। কে কোন কলেজে ভর্তি হচ্ছেন, তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় দেখতে পারে, জানতে পারে। শিক্ষার্থীদের সারি ভেঙে কাউকে কোনো কলেজে ভর্তি করানোর সুযোগ নেই।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা বলেন, সবকিছুর আগে মেডিকেল শিক্ষার মান ঠিক রাখার ওপর জোর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, অটোমেশন পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থী ভর্তিতে জটিলতা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বা মালিকপক্ষের প্রতিনিধি অটোমেশন পদ্ধতি বাতিলের পক্ষে কথা বলেন। আবার অটোমেশন পদ্ধতি রেখে সমস্যা সমাধানের কথা বলেন বেশ কয়েকজন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ভালো কলেজে ভর্তি করার মতো শিক্ষার্থীর অভাব হচ্ছে না। নামকাওয়াস্তে কলেজ খুললে তা চলবে না, তারা শিক্ষার্থী পাবে না। বেসরকারি কলেজের মেডিকেল শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। মান না থাকলে সেসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজও থাকবে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সংগৃহীত তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সাংবাদিকেরা বলেন, ১ হাজার ২০০ আসন খালি থাকার তথ্য সঠিক নয়। বাস্তবে ৬৩৫টি আসন খালি আছে। খুব শিগগির তা-ও পূরণ হয়ে যাবে। টাকা থাকলেই শিক্ষার্থীকে তাঁর পছন্দের মেডিকেলে ভর্তি করাতে হবে-এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন সাংবাদিকেরা।
বিশ্বব্যাংকের শিক্ষাবিষয়ক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, অটোমেশন পদ্ধতির সুবিধা বেশি। কোনো সমস্যা হয়ে থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে, পদ্ধতি বাতিল করা ঠিক হবে না।
অনুষ্ঠানের অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহসভাপতি অধ্যাপক রওশন আরা বেগম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি জামালউদ্দিন।