ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কাছ থেকে হলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে না প্রশাসন

গত পাঁচ বছরে অন্তত পাঁচবার হলের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন পর্যায়ে অন্তত পাঁচবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাদের সেসব আলোচনা ও সিদ্ধান্ত কাগজেই রয়ে গেছে। বাস্তবে এখনো ছাত্রদের হলগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে।

হল প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রদের হলগুলো পুরোপুরি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নিতে গেলে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে, শিক্ষকেরা হেনস্তা হতে পারেন—এমন আশঙ্কা থেকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য কেউ উদ্যোগী হন না। হলের প্রাধ্যক্ষরা শুধু প্রশাসনিক কাজগুলোই করে থাকেন। আর আবাসিক শিক্ষকেরা সব সুযোগ-সুবিধা পেলেও কার্যত হলের তেমন কোনো কাজ করেন না বা করতে পারেন না।

ছাত্রদের হলে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। শুধু মুখে বলে বা প্রশাসন কঠোর হলেই সমস্যার সমাধান হবে না।
এ এস এম মাকসুদ কামাল, উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্‌দীন হল

শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছাত্রসংগঠনের নেতারা হল নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। তাঁরা ঠিক করেন কে হলে উঠতে পারবেন, কে পারবেন না এবং কে কোন কক্ষে থাকবেন। ১৫ বছর ধরে এটি করছেন ছাত্রলীগের হল শাখার নেতারা। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে তোলেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের নেতারা। এর মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের দল ভারী করেন। প্রথমে তাঁদের থাকতে দেওয়া হয় ‘গণরুমে’। হলে ওঠার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের একটা সময় পর্যন্ত নিয়মিত সংগঠনের মিছিল-সমাবেশে অংশ নিতে হয়। রাতে হাজিরা দিতে হয় ‘গেস্টরুমে’। এই দল ভারী করা নিয়ে প্রায় প্রতিবছর ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে বিভেদ বা সংঘাতের ঘটনা ঘটে।

পাঁচ বছরে যেসব সিদ্ধান্ত

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে। মেধার ভিত্তিতে হলে আসন বরাদ্দ করা হবে। হল প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী হলে উঠতে ও অবস্থান করতে পারবেন না। ওই বছরেরই ২৩ অক্টোবর হল প্রশাসনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে একটি মতবিনিময় সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে তৎকালীন উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেছিলেন, কোনোভাবেই অছাত্রদের হলে অবস্থান করতে দেওয়া যাবে না। শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে শূন্য আসনে সিট বরাদ্দ করতে হবে।

এরপর করোনা মহামারির সময়, ২০২০ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত প্রভোস্ট কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শুধু বৈধ ছাত্ররা হলে অবস্থান করবেন। গণরুমের অবসান ঘটবে। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, হলগুলোতে ‘কথিত গণরুম’ রাখা যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল

সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের সঙ্গে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় হল প্রশাসনের সিট বরাদ্দ কার্যক্রমসহ নিয়মিত ব্যবস্থাপনা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের দায়িত্ব-কর্তব্য নির্ধারণ করা হয়। আবাসিক হলে অতিথি কক্ষের অপব্যবহার রোধে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ কঠোর নজরদারির সিদ্ধান্ত হয়।

এসব সিদ্ধান্তের আগে ২০১৯ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ডাকসুর বৈঠকে হলগুলোতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, গণরুম, গেস্টরুম বিষয়ে আলোচনা হয়। মেধার ভিত্তিতে হল প্রশাসনের মাধ্যমে হলে সিট বরাদ্দ নিয়ে ওই সভায় ঐকমত্য হয়েছিল। তবে এসব আলোচনা-সিদ্ধান্তের কোনোটাই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।

কেন কার্যকর হয় না

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং আছেন এমন অন্তত ১৫ জন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আবাসিক শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু সিদ্ধান্ত নিয়েই দায়িত্ব শেষ করে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, হলে ছাত্রদের আসন বরাদ্দ দেওয়া বা ছাত্রত্ব শেষে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা আবাসিক শিক্ষকদের নেই। এটি করার ক্ষেত্রে সব সময় মূল বাধা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন। এখানে হস্তক্ষেপ করতে গেলে হেনস্তার শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে শিক্ষকেরা এসব ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার সাহস করেন না। কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেবল সিদ্ধান্ত নেয়, কার্যকর উদ্যোগ নেয় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হল

এই শিক্ষকেরা বলেন, বিএনপি যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, তখন হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করত ছাত্রদল। মাঝে ২০০৭–০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হলগুলোতে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ ছিল।

২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উপাচার্য হন অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তাঁর আমলে স্যার পি. জে. হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রভোস্ট ছিলেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সে সময় প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে একটি প্রস্তাব তুলেছিলেন তিনি। সেটি উল্লেখ করে আসিফ নজরুল প্রথম আলোকে বলেন, হলে আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিতে হবে। বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ছাত্রদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে সম্পূর্ণ উল্টো। প্রথম বর্ষের ছাত্ররা গণরুমে থাকতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, তাঁর প্রস্তাবে সে সময় সবাই সায় দিয়েছিলেন, কিন্তু তা সিদ্ধান্ত আকারে গ্রহণ করা হয়নি। শুধু এই সিদ্ধান্তটা নেওয়া হলে আবাসিক হলকেন্দ্রিক ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের যেসব অত্যাচারের ঘটনা ঘটে, তা বহুলাংশে কমে যাবে। এ কারণেই ক্ষমতাসীন দল ও তাদের অনুগত শিক্ষক ও প্রশাসন এটি কখনো করবে না।

ছাত্রদের হলগুলোতে স্বাভাবিক পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ নেই। আছে মাস্তানির উপযোগী পরিবেশ। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান

২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রথম সভায় আবাসিক হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টনসহ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু করা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে জানান তখনকার সহসভাপতি (ভিপি) নূরুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের নেতারাও ওই বৈঠকে এ নিয়ে একমত হয়েছিলেন। কিন্তু পরে ছাত্রলীগের হল পর্যায়ের নেতারা চাননি বিষয়গুলো প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করুক। কারণ, এটি হলে ভিন্নমতের শিক্ষার্থীরা হলে উঠে যাবেন।

২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের চারজন নেতাকে ছাত্রলীগের প্যানেল প্রস্তুত করার দায়িত্ব দিয়েছিল দলটি। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ওই সময় আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত ছাত্রদের হলে রাখা, হলে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিষয় নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল। পরে ওই আলোচনা আর এগোয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, করোনার কারণে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে হলের কার্যক্রম প্রশাসনের মাধ্যমে চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দিন কিছু সময়ের জন্য ছাত্রদের হলে ওঠার সময় নামমাত্র পরিচয়পত্র দেখা হয়েছিল। পরে পরিস্থিতি আগের মতো হয়ে যায়।

দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অনিয়ম দূর করতে কৌশলে এগোতে হয়। তাঁদের সিদ্ধান্ত একেবারে বাস্তবায়িত হয়নি, সেটা নয়। প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ দেওয়া, গণরুম অপসারণ, হল অছাত্রদের দখলমুক্ত করা—এসব বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, তবে পূর্ণাঙ্গ হয়নি। কিন্তু গণরুমের সংখ্যা কমেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ছিলেন আখতারুজ্জামান

এরপর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে হলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত পদক্ষেপ নেয়নি। তখনকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, ওই বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিল বিএনপি। ওই সময় ছাত্রলীগের কাছ থেকে হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলে ভিন্ন রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে; এমন আশঙ্কা ছিল। পরের বছর ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন। এসব মিলিয়ে প্রশাসন আর উদ্যোগী হয়নি।

গত পাঁচ বছরে এই সিদ্ধান্তগুলো যখন নেওয়া হয়েছিল, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন আখতারুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অনিয়ম দূর করতে কৌশলে এগোতে হয়। তাঁদের সিদ্ধান্ত একেবারে বাস্তবায়িত হয়নি, সেটা নয়। প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ দেওয়া, গণরুম অপসারণ, হল অছাত্রদের দখলমুক্ত করা—এসব বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, তবে পূর্ণাঙ্গ হয়নি। কিন্তু গণরুমের সংখ্যা কমেছে।

ছাত্রলীগের ‘বড় ভাইয়েরা’ নতুনদের নানা নির্দেশনা দেন, জবাবদিহি করেন। এখানে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে। এটি ‘গেস্টরুম’ হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি বিজয় একাত্তর হলে গেস্টরুমে এক শিক্ষার্থী অচেতন হয়ে পড়েন।

নতুন উদ্যোগ কতটা সফল হবে

গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর হল প্রশাসন নিয়ে নতুন একটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদের হলে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। শুধু মুখে বলে বা প্রশাসন কঠোর হলেই সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য তাঁরা ‘মেকানিক্যাল অ্যাপ্রোচ’ নিচ্ছেন। একটি অ্যাপ করা হচ্ছে। সেখানে হলের সব শিক্ষার্থীর কক্ষভিত্তিক তথ্য থাকবে। আবাসিক শিক্ষকেরা প্রতি সপ্তাহে দুদিন তাঁর নির্ধারিত ব্লকে গিয়ে খোঁজ নেবেন, তথ্য আপলোড করবেন। এভাবে নিয়মিত তদারক করা হবে। এতে সুফল পাওয়া যাবে। এ কাজে ছাত্রসংগঠনগুলোরও সহায়তা চাওয়া হবে।

তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসনের নতুন এই উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। এই ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন বড় বাধা। কারণ হলগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে সংগঠনের আধিপত্য ধরে রাখা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে ছাত্রলীগ কোনো বাধা নয়। কিন্তু এখানে কিছু ‘টেকনিক্যাল’ সমস্যা আছে। প্রশাসনে একেকবার পরিবর্তন হয়, আর একেক ধরনের নীতি নেওয়া হয়। ছাত্রলীগের এই নেতা দাবি করেন, হলের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের হাতেই আছে। ছাত্রলীগ শুধু প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে তুলে থাকে মানবিক কারণে। অনেকে গ্রাম থেকে, গরিব পরিবার থেকে আসেন। অনেকে তাঁদের হলে থাকার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন।

বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলে থাকা প্রথম বর্ষের ছাত্রদের নিয়মিত মিছিল–সমাবেশে যেতে হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যা বা রাতে হলের অতিথিকক্ষে বা অন্য কোনো কক্ষে হাজিরা দিতে হয়। সেখানে ছাত্রলীগের ‘বড় ভাইয়েরা’ নতুনদের নানা নির্দেশনা দেন, জবাবদিহি করেন। এখানে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে। এটি ‘গেস্টরুম’ হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি বিজয় একাত্তর হলে গেস্টরুমে এক শিক্ষার্থী অচেতন হয়ে পড়েন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদের হলগুলোতে স্বাভাবিক পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ নেই। আছে মাস্তানির উপযোগী পরিবেশ। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না।