দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী একই ব্যক্তি হতে পারবেন না। আর কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে সরকারের অন্য কোনো লাভজনক পদে থাকতে পারবেন না।
নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে এসব বিষয় উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সভা হয়। সভায় ৫১টি প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।
সভার শুরুতে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচনব্যবস্থায় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মতো আর কোনো সরকার ক্ষমতায় এসে যেন স্বৈরাচার না হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য এই সংস্কার। কী ধরনের সংস্কার করলে কেউ স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারবে না, এর জন্য বিভিন্ন অংশীজনের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে। সবার কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করার পর সরকারের কাছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব করা হবে। নির্বাচনব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা কী ধরনের সংস্কার চান, তা তাঁদের কাছে জানতে চান বদিউল আলম।
এ সময় অন্তত ১৯ জন শিক্ষার্থী তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। এর মধ্যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আসিফ হাসান বলেন, নির্বাচনের পর যে দল ক্ষমতায় যাবে, ওই দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। কারণ, সভাপতির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি দলের স্বার্থ হাসিলের চিন্তা করবেন। সেই সঙ্গে সংসদের স্পিকারও ক্ষমতাসীন দলের হতে পারবেন না। জাতীয় নির্বাচনের আগে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন দিতে হবে।
আসিফ হাসানের এসব প্রস্তাব সমর্থন করেন কি না, তা শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান বদিউল আলম মজুমদার। তখন শিক্ষার্থীরা হাত তুলে সমর্থন জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা রাখার কথা বলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আহমেদ সালমান।
‘তরুণেরাও যেন নির্বাচন করতে পারেন’
শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন দল আসতে পারে। তাদের দল গোছানোর জন্য সময় দেওয়া উচিত। সভায় সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী জায়েদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনে তরুণেরাও যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, সে সুযোগ রাখা প্রয়োজন।
সরাসরি জনগণের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া উচিত বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। সভায় তাঁরা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনী বিরোধের মীমাংসার সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়া উচিত নয়। আগের সচিবসহ আমলারা যাঁরা এখনো ক্ষমতায়, তাঁদের চান না শিক্ষার্থীরা।
সংস্কার করার আগে ভোটে গেলে নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব দেন একজন শিক্ষার্থী। আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সংস্কার কমিশন ভুল পথে গেলে জবাবদিহির মুখোমুখি করতে হবে।
রাজনৈতিক দলের মধ্যেও গণতন্ত্র থাকা প্রয়োজন উল্লেখ করে এক শিক্ষার্থী বলেন, দলের সব পর্যায়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচন করা উচিত।
শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। তাঁদের ভাষ্য, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি অস্পষ্ট। সেখানে স্পষ্টতা আনা প্রয়োজন। নির্বাচনের সময় যেন কোনোভাবেই ইন্টারনেট বন্ধ করে না দেওয়া হয়, সে দাবিও জানান তাঁরা।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নির্বাচনী পোস্টারে প্লাস্টিকের ব্যবহার না করার দাবিও জানান তাঁরা।
গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে পারেন, সেই দাবি জানান একাধিক শিক্ষার্থী। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বায়জিদ প্রস্তাব দেন, গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদ সদস্যরা নতুন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আর বিচার না করা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করা যাবে না।
‘ফ্যাসিবাদী হতে দেওয়া হবে না’
শিক্ষার্থীদের কাছে সরকারের এই আসাটাকে ভালো দিক বলে সভায় উল্লেখ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন ফাটল ধরাতে না পারে, সেই আহ্বান জানান তিনি। উমামা ফাতেমা বলেন, আগামী দিনে যারাই ক্ষমতায় আসুক, তাদের ফ্যাসিবাদী হতে দেওয়া হবে না। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের জনবান্ধব হতে হবে।
এত দিন সন্ত্রাসী, চোর, মাদকাসক্তদের দ্বারা দেশবাসী শাসিত হয়ে আসছিলেন বলে মনে করেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, দেশকে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ে যেতে হবে। সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যেন টেকসই হয়। আইনের শাসন থাকে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী, মো. আবদুল আলীম, জাহেদ উর রহমান, মীর নাদিয়া নিভিন, মোহাম্মদ সাদেক ফেরদৌস প্রমুখ।