বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী

যৌন নিপীড়নের শিকার ৯০% ছাত্রী অভিযোগ করেন না

সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন রোধে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র’ রয়েছে। কিন্তু নির্যাতনের শিকার ছাত্রী বা নারী শিক্ষকেরা সেখানে অভিযোগ দিতে চান না। কারণ, অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হলে বা ক্ষমতাসীন দলের হলে সেল বিচারে গড়িমসি করে। লোকলজ্জা, সামাজিক চাপও বড় বাধা।

যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ ছাত্রীই অভিযোগ করেন না। গবেষণা প্রতিবেদনের এই পরিসংখ্যান দেখে ধাক্কা লেগেছিল। এটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, একটি ভীতিকর বার্তা। ঘটনার একটু ভেতরে গেলেই তা উপলব্ধি করা যায়।

দীর্ঘক্ষণ আলাপের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জানালেন তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। তিনি নিজেই কর্মস্থলে নিপীড়নের শিকার হন। এ সময় বহুকাল আগে দেখা ‘একঘরে’ এক পরিবারের কথা তাঁর মনে পড়ল। ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করা কিশোরীর পরিবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিল বলে সমাজ তাদের একঘরে করেছিল। ওই শিক্ষক সেদিন নিজেকে ওই অসহায় পরিবারের জায়গায় দেখতে পাচ্ছিলেন।

আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন এক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, বিচার তো পেলেনই না, উল্টো ওই পুরুষ শিক্ষক দাপটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘এটা যে কী মানসিক ট্রমা, তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না। আমার বিচার চাওয়া কি অপরাধ ছিল? আমি আর কাউকে এমন পুতুল সেলের (বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র) কাছে বিচার চাওয়ার পরামর্শ দেব না।’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রভাব, কোথায় বিচার পাওয়া যাবে—সে সম্পর্কে প্রচারের ঘাটতি, শিক্ষকদের অসহযোগিতা, লোকলজ্জা, সামাজিক চাপ এবং পরিবার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে পারে—এমন ভয়ে অনেক ছাত্রী অভিযোগ না করে পড়ালেখা শেষ করার চেষ্টায় থাকেন। একই মনোভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরও।

যেমনটা গত ৮ জুন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক সভায় বলেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান (এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) অধ্যাপক সাদেকা হালিম। তিনি বলেন, ‘অভিযোগকারী নারীর দিকেই অনেক সময় আঙুল তোলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলে একটি অভিযোগ দেড় বছর ধরে আটকে আছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অপেক্ষা করেন, যেন মেয়েটি মাস্টার্স শেষে চলে যান। তাঁরা মনে করেন, ছাত্রীর বিদায়, যৌন হয়রানির মামলারও বিদায়।’

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইয়াসমীন হক ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলের প্রধান ছিলেন। সে দিনের সভায় তিনি বলেছিলেন, উপাচার্যের ওপর যৌন নিপীড়নের বিচার অনেকটা নির্ভর করে। উপাচার্যের ক্যাডারের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে তদন্ত প্রতিবেদন সিন্ডিকেটে পাঠান না। এ ধরনের উপাচার্যের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু কে যাবে রিট করতে?

১৪ বছর আগে যুগান্তকারী রায়

কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ২০০৮ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ২০০৯ সালের ১৪ মে রিটের পক্ষে রায় দেন।

২০০৯ সালের রায়ের প্রেক্ষাপটে ১৯৯৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষকদের আলোচিত বিক্ষোভের কথা তুলে আনা হয়েছিল। এ ধরনের নিপীড়নের বিচার করতে একটি আইনি কাঠামোর দাবি তুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকেরা। রায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে এক নারী কর্মকর্তার আদালতে যাওয়া এবং উল্টো চাকরি হারানো, ২০০৬ সালে রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর অভিযোগসহ যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ১৯টি ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়।

যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা-২০১০ অনুযায়ী, অপরাধের মাত্রা অনুসারে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মৌখিক বা লিখিতভাবে সতর্ক করা, ১-২ বছরের বহিষ্কার (শিক্ষার্থী), চাকরিচ্যুত, প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত রাখা, অর্থদণ্ড দেওয়া (শিক্ষক ও কর্মচারী) এবং ক্যাম্পাসে চলাচল নিষিদ্ধ (বহিরাগত) করার বিধান রয়েছে।

তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নির্দেশনা মেনে সেল গঠন করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের নারী অধিকার ও মানবাধিকার সংস্থার দুজন প্রতিনিধি রাখার নিয়মও মানা হয় না।

চাপা পড়ে অভিযোগ

পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অভিযোগ যাচাই করতে গিয়ে অভিযোগ চাপা দেওয়ার নানা নজির পাওয়া গেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন, নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে অনৈতিক সম্পর্ক গড়তে চেয়েছিলেন শিক্ষক। তদন্তে শিক্ষককে অভিযুক্ত করে উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় সেটি তুলতে সময়ক্ষেপণ করা হয়। এরই মধ্যে সেই শিক্ষক বিদেশে চলে যান।

শাহজালালের শেষ বর্ষের আরেক ছাত্রী সেলে অভিযোগ করেন, শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই তিনি নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। পরিবার জানতে পারলে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে পারে, সেই আশঙ্কায় এত দিন বলেননি। তাই শিক্ষাজীবনের শেষ সময়ে তিনি অভিযোগ করেন। ছাত্রটিরও পড়াশোনা শেষ। ফলে সেলের সদস্যরা ছাত্রকে শুধু মৌখিকভাবে সতর্ক করেন।

২০২১ সালের আগস্টে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক তাঁর পুরুষ সহকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। প্রথমে ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে গত বছরের ১৩ জুন যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালার দুটি ধারা উল্লেখ করে সেল জানায়, শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। অথচ নীতিমালাটি পড়লে দেখা যায়, দুটি ধারা ছাড়াও অভিযোগের শাস্তি নিশ্চিত করার বেশ কয়েকটি ধারা-উপধারা রয়েছে।

সেলের সভাপতি অধ্যাপক তাসলিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, কোনো পক্ষ থেকে প্রভাবিত না হয়ে কমিটি কাজ করে।

ওই ঘটনার পর আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২২ শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের অভিযোগ জানালে প্রথমে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত ও পরে তা তুলে নেওয়া হয়। আরেক প্রাক্তন ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সেলের আহ্বায়ক ছিলেন অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ। ওই সময়ের দুটি ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক কামরুল হাসান মজুমদারের বিরুদ্ধে। তিনি প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ৯ মাসের চেষ্টায় তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অধ্যাপক আবদুস সালামের বিরুদ্ধে শিক্ষাসফরে এক ছাত্রীকে নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। তবে সেলের প্রতিবেদন নিয়ে সিন্ডিকেট অহেতুক দেরি করে। ওই সময়ের মধ্যে অধ্যাপক সালাম আগাম অবসরের প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৪টি অভিযোগ এসেছে। ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মাঝামাঝি তিনটি অভিযোগের প্রতিবেদন সেল জমা দিলেও সিন্ডিকেটে তোলা হয়নি। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মেয়াদে সেলের ছয়টি অভিযোগের প্রতিবেদন সিন্ডিকেটে ওঠেনি।

গবেষণার তথ্য যা বলছে

শুরুতে উল্লেখ করা গবেষণা প্রতিবেদনটি করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আলীম। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত স্নাতকোত্তর ও স্নাতকে অধ্যয়নরত ২০০ ছাত্রী ওই গবেষণায় অংশ নেন। ‘বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরুষতান্ত্রিক ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধের কৌশল (স্ট্র্যাটেজিস ফর প্রিভেন্টিং মাসকুলিনিটি অ্যান্ড জেন্ডার বেজ্‌ড ভায়োলেন্স ইন হায়ার এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন ইন বাংলাদেশ: আ স্টাডি অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটি)’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, ৫৬ শতাংশ নিপীড়কই ছাত্রীদের সহপাঠী। ২৪ শতাংশ তাঁদের চেয়ে ছোট বা বড়। ১১ শতাংশ বহিরাগত ও ৯ শতাংশ শিক্ষক।

১০ শতাংশ ছাত্রী জানান, নির্যাতনের ৩০ শতাংশ বাজে মন্তব্য ও ৬০ শতাংশ সাইবার হয়রানি। নিপীড়নের ঘটনায় মাত্র ১০ শতাংশ ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন। এর মধ্যে ৫ শতাংশ বিভাগের শিক্ষকদের কাছে এবং বাকি ৫ শতাংশ সেলে। ৯২ শতাংশ জানান, ন্যায়বিচার না পাওয়া ও চরিত্র হননের ভয়ে তাঁরা সেলে অভিযোগ করেননি।

ছাত্রীদের অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী। শিক্ষকেরা ভুক্তভোগীদের তেমন সাহায্য করেন না, মনোভাবও ততটা সহযোগিতাপূর্ণ নয়। এ অবস্থায় তাঁরা অসহায় বোধ করেন।

অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, শিক্ষার্থীকে কোথায় অভিযোগ করতে হবে, সেটি জানানো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে নিপীড়নের ঘটনা ঘটলেও সেল বিচার করতে পারবে। ক্যাম্পাসের বাইরে ঘটেছে বলে এড়ানোর সুযোগ নেই।

অধ্যাপক আলীম আরও বলেন, বিচার না হওয়ার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি আছে। এতে অনেক ছাত্রী আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে ভুক্তভোগী ছাত্রীদের সহায়তা দিতে পরামর্শক কেন্দ্র খোলা উচিত। বিচার যেন ধামাচাপা না পড়ে, সে জন্য ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন সিন্ডিকেটের সভায় তুলতে হবে।

ঘটনা ঘটছেই

গত নভেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ বেশ পুরোনো। সেলের তথ্য অনুসারে, সেল গঠনের পর ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০টি অভিযোগ এসেছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ৭টি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলের সদস্য সহযোগী অধ্যাপক সীমা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সব অভিযোগই শোনা হয়। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৪ মাসে পাঁচটি অভিযোগ এসেছিল। পাঁচটিই সহপাঠী ছাত্রের বিরুদ্ধে। এক ছাত্রী জানিয়েছিলেন, সহপাঠীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর ছাত্রটি তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করেন।

সেলের প্রধান অধ্যাপক সাবিনা ইসলাম বলেন, ছোটখাটো অভিযোগ হওয়ায় কাউকে মৌখিক, কাউকে লিখিতভাবে সতর্ক করা হয়েছে। গত ছয় মাসে কোনো অভিযোগ আসেনি।

সেলের সদস্য বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধি সৈয়দা শিরীন আক্তার বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেল বেশ শক্তিশালী। তিনি বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলেরও সদস্য, সেগুলো দুর্বল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছরের ২১ মে অধ্যাপক এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগের সভা চলাকালে বাজে শব্দ ব্যবহার ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করার অভিযোগ করেন এক নারী শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক তানজিমা জোহরা হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যাপক এনামুলকে দুই বছর ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

তবে অধ্যাপক এনামুল বলেন, তর্কাতর্কির একপর্যায়ে তিনি মেজাজ হারিয়ে চেঁচামেচি করেছিলেন। সেটি যৌন নিপীড়নের পর্যায়ে পড়ে না।

আরেকটি নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে ক্যাম্পাসের বাইরে। এক শিক্ষকের কিশোরী মেয়েকে ব্যক্তিগত চেম্বারে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে। ১১ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটের সভায় তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

২০২২ সালের জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় পাঁচ তরুণ এক ছাত্রীকে বেঁধে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। ওই ঘটনায় তুমুল বিক্ষোভের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রসহ চারজনকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। এঁদের দুজন ছাত্রলীগের কর্মী। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক ঘটনার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ ছিল শিক্ষার্থীদের।

সেলের সদস্যসচিব অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, গত বছরের ঘটনায় অভিযুক্তরা জেল খেটেছে। তাদের ছাত্রত্ব বাতিল হয়েছে। এরপর সেলে নিপীড়নের আর কোনো অভিযোগ আসেনি।

নারীবিদ্বেষী মনোভাব দূর করতে শিশু বয়স থেকে পারিবারিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়। সেটা দীর্ঘ পথের যাত্রা। কত দিনে পরিবর্তন আসবে, সেটা কারও জানা নেই। যৌন নিপীড়নের ক্ষত নারীর পথের গতি কমিয়ে দেয়। বিচারহীনতা তাতে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়। কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলপরী খাতুনের মতো প্রতিবাদ করার মনের জোরও সব নারীর নেই। তাই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া সবচেয়ে জরুরি।