‘দক্ষতায় গড়ি ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আয়োজন শেষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কে এম হাসান
‘দক্ষতায় গড়ি ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আয়োজন শেষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কে এম হাসান

শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী ভবিষ্যৎ গড়ার সহায়ক ‘ক্যারিয়ার লঞ্চপ্যাড’

শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যৎ পেশাজীবনের জন্য তৈরি করা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। দেশের কারিগরি শিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ‘ক্যারিয়ার লঞ্চপ্যাড’সহ ভিন্ন রকম কিছু উদ্যোগ রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত করা ও ভবিষ্যতের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

দেশের কারিগরি শিক্ষা ও ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার ভাবনা সম্পর্কে এর চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেন, ‘কর্মজীবনে সফলতা অর্জনের জন্য শুধু একাডেমিক জ্ঞানই যথেষ্ট নয়। ক্যারিয়ার গঠনের জন্য প্রয়োজন সঠিক নির্দেশনা, বাস্তব দক্ষতা এবং ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন। এ তিনটি জিনিস সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের নিশ্চিত করতেই ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিশেষ এ উদ্যোগগুলোর যাত্রা।

ক্যারিয়ার লঞ্চপ্যাডের বিশেষত্ব

শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও ওয়ার্কশপের মাধ্যমে তাঁদের ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ করে দেয় ক্যারিয়ার লঞ্চপ্যাড। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইন্ডাস্ট্রির বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন এবং চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হন। ক্যারিয়ার লঞ্চপ্যাড শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত ‘জব ফেয়ার’ আয়োজন করে। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে একাধিক সাক্ষাৎকার দেওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

ক্যারিয়ার লঞ্চপ্যাড থেকে প্রশিক্ষিত ড্যাফোডিল পলিটেকনিকের অনেক শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম এ প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) এস্টিমেটর মৃত্যুঞ্জয় রায়। তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ার লঞ্চপ্যাড আমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করেছে এবং বাস্তব কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে।’

ফাউন্ডেশন ক্লাস ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রস্তুতি

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথম থেকেই রয়েছে ‘ফাউন্ডেশন ক্লাস’। এই ক্লাসগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ফিজিকস, কেমিস্ট্রি, ইংরেজি ও গণিতের ওপর বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন, যা তাঁদের ভবিষ্যতের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার জন্য মজবুত ভিত্তি তৈরি করে। এ ছাড়া ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ক্লাসের মাধ্যমে তাঁরা পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুত হন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর এ দক্ষতাগুলো নিশ্চিতে বিশেষ যত্ন নেন সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা।

উদ্যোক্তা তৈরির সেল

শুধু চাকরি খোঁজার পরিবর্তে যাঁরা উদ্যোক্তা হতে চান, তাঁদের জন্য রয়েছে ‘এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট সেল’। এই সেল শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মেন্টরিং ও ফান্ডিং সাপোর্ট প্রদান করে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের বিজনেস আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে পারেন। এমন উদ্যোগই শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। এই সেলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বর্তমানে রোবাস্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অলিদ হাসান আকাশ। তাঁর মতে, ‘আমি বিজনেস আইডিয়া নিয়ে অনেক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। প্রতিটি ধাপে শিক্ষকেরা আমাকে সহায়তা করেছেন। আজকের ‘‘আমি’’ হওয়ার পেছনে এ প্রতিষ্ঠানের অনেক অবদান রয়েছে। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে আয়োজিত ‘প্রজেক্ট ফেস্ট’ পরিদর্শনে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ইকোনমিক ইউনিটের চিফ জোসেফ গিবলিন

ইনক্লুসিভ লার্নিং সেল (আইএলসি)

বিশেষভাবে তৈরি ইনক্লুসিভ লার্নিং সেল শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউটরিং বা গাইডনির্ভরতা কমিয়ে এনেছে। দলবদ্ধ কাজ, কোর্স ফিডব্যাক ও পারসোনাল লার্নিং পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা নিশ্চিত করে আইএলসি। যা তাঁদেরকে ক্লাসের বাইরে অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি দেয়। এ সেলের প্রধান ফারহা দিবা বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের জীবন-দক্ষতা বৃদ্ধির কাজ এখানে করা হয়। ফলে এক্সট্রা কারিকুলার ও কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের নেতৃত্ব বিকাশ, যোগাযোগ দক্ষতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

আন্তর্জাতিক আসরেও সাফল্য

ড্যাফোডিল পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সাফল্য অর্জন করছেন। যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য রোবট প্রতিযোগিতায় আমন্ত্রণ পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। ন্যাশনাল হ্যাভক রোবট লিগ (এনএইচআরএল) শীর্ষক আয়োজনে অংশ নেবেন ইশমাম তাহসান মাসাফী ও তাঁর দল।

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয়, শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ক্যারিয়ার গঠনের প্ল্যাটফর্মও। প্রতিষ্ঠানটির ক্যারিয়ার লঞ্চপ্যাডসহ অন্য উদ্যোগগুলো নিয়ে অধ্যক্ষ কে এম হাসান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শূন্য শতাংশ বেকারত্ব। ড্যাফোডিল পলিটেকনিক থেকে পড়াশোনা শেষ করে কোনো ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার যেন বেকার না থাকেন, সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য। সে কারণেই ক্যারিয়ার লঞ্চপ্যাডের মতো বিশেষ উদ্যোগগুলো চালু করেছি। আমরা চাই, আমাদের সব গ্র্যাজুয়েট কর্মজীবনের জন্য এখান থেকেই তাঁদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করুক। তাই ড্যাফোডিল পলিটেকনিক সব শিক্ষার্থীকে কর্মমুখী ও ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদান করে। ফলে এখান থেকে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীরা পেশাগত জীবনে উন্নতি করতে সক্ষম হয়।’

তাই যেসব শিক্ষার্থী নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে চান, তাঁদের জন্য ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে পারে একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন ০১৭১৩৪৯৩২৪৬, ০১৮৩৩১০২৮২১ নম্বরে বা ভিজিট করুন: dpi.ac