এক যুগেও র‌্যাঙ্ক ব্যাজ না পাওয়ায় পুলিশ পরিদর্শক ও এসআইদের ক্ষোভ

পদমর্যাদা উন্নীত করার পর এক যুগ পেরিয়েছে। এখনো র‍্যাঙ্ক ব্যাজ পাননি প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদায় উন্নীত পুলিশের পরিদর্শক ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় উন্নীত উপপরিদর্শকেরা (এসআই)। সেই সঙ্গে তাঁদের কিছু দাবি এখনো পূরণ হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।

এ ক্ষোভ-হতাশার পরিপ্রেক্ষিতে নন–ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর নয়াপল্টনে পলওয়েল মার্কেটের কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) আশপাশের বিভিন্ন থানার ওসিরা এতে অংশ নেন।

পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেছেন, ন্যায়সংগত দাবি পূরণের জন্য তাঁরা এখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান। তাঁদের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের দাবি পূরণ করবেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা বলছেন, ২০১২ সালে পরিদর্শক পদটি প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা এবং এসআই ও ট্রাফিক সার্জেন্টের পদ দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। তখন থেকে পরিদর্শকদের নির্ধারিত ব্যাজ পাওয়ার কথা। পরিদর্শকদের দুই কাঁধে দুটি করে মোট চারটি পিপস এবং এসআই ও ট্রাফিক সার্জেন্টদের দুই কাঁধে একটি করে দুটি পিপস পরার কথা। কিন্তু গত এক যুগেও তাঁরা নির্ধারিত র‍্যাঙ্ক ব্যাজ পরতে পারেননি।

প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদায় উন্নীত হওয়ার এত বছর পরও পুলিশ পরিদর্শকেরা এখনো ৯ম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তারা ১০ বছর চাকরি করার পর সিলেকশন গ্রেড পেয়ে ৬ষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত হন। পুলিশ পরিদর্শকেরা তা থেকে বঞ্চিত।

পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, অন্যান্য ক্যাডারে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদার কর্মকর্তারা যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, তার সঙ্গে তাঁদের সমন্বয় করা উচিত। পুলিশে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়মিত পদোন্নতি হয়। কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পদে সেই অনুপাতে পদোন্নতি হচ্ছে না।

সারা দেশে পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার ৬ হাজার ৯১০ কর্মকর্তা এবং এসআই পদমর্যাদার ২৬ হাজার ৩৪৮ কর্মকর্তা আছেন।

অ্যাসোসিয়েশনের একজন নেতা (ডিএমপির একটি থানার ওসি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়মিত ও সুপার নিউমারারির মাধ্যমে পদোন্নতি হয়। কিন্তু কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত পদে থাকা কর্মকর্তাদের এভাবে পদোন্নতি হচ্ছে না। গত দুই দশক তিনি ওসি পদে আটকে আছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন ওসি বলেন, পুলিশ সপ্তাহে ক্যাডার কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের সব দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছেন। অথচ নন–ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি নিয়ে তাঁরা কিছু বলছেন না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, র‍্যাঙ্ক ব্যাজ পাওয়াসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে একাধিকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও অতিরিক্ত আইজিপির (প্রশাসন) সঙ্গে বৈঠক করে দাবি তুলে ধরা হয়েছে। দাবি পূরণের আশ্বাস পাওয়া গেছে, কিন্তু সেগুলোর কোনোটির বাস্তবায়ন ঘটেনি।

মাজহারুল ইসলাম বলেন, এখন সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। আশা করা হচ্ছে, দাবি পূরণ হবে। নাহলে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।