বিটিআরসি
বিটিআরসি

দায়মুক্তি দেওয়া হলো সরকারি কর্মকর্তাদের

ডিজিটাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম–সংক্রান্ত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রবিধানের চূড়ান্ত খসড়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের সরল বিশ্বাসে (গুড ফেইথ) করা কোনো কাজের জন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করা যাবে না।

বিটিআরসি গতকাল বুধবার ‘রেগুলেশন ফর ডিজিটাল অ্যান্ড সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মস, ২০২১’ শীর্ষক প্রবিধানের চূড়ান্ত খসড়া হাইকোর্টে জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।

বিটিআরসির চূড়ান্ত খসড়ায় দায়মুক্তি নামে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যেটি আগে ছিল না। নতুন ধারায় বলা হয়েছে, এই প্রবিধানের অধীনে কোনো আদেশ বা নির্দেশনার বাস্তবায়নে সরল বিশ্বাসে করা কোনো কাজের জন্য যদি কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে তিনি মন্ত্রী বা সরকারের কোনো কর্মচারী, বিটিআরসির চেয়ারম্যান বা কমিশনের অন্য কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী বা পরামর্শকের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষতিপূরণ মামলা করতে পারবেন না।

প্রবিধানের চূড়ান্ত খসড়ার দায়মুক্তি ধারায় আরও বলা হয়েছে, লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের মাধ্যমে উদ্ভূত কোনো লোকসান, ক্ষতি, আর্থিক দাবি ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিটিআরসি বা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান দায়ী হবে না।

সরকারের কর্মচারীদের দায়মুক্তির ধারার বিষয়ে জানিয়ে মতামত জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক সাইমুম রেজা এই প্রশ্ন তোলেন যে যদি এই খসড়া প্রবিধানে উদ্দেশ্য পূরণের কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীদের দায়মুক্তির বিধান থাকে, তাহলে তা দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় কি?

তিনি লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, সংবিধানে দেশের মানুষের সমতা ও আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আবার জাতিসংঘের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ১০ অনুচ্ছেদ এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির ১৪ অনুচ্ছেদে উপযুক্ত আদালতে ন্যায়বিচার লাভের অধিকারের কথা বলা হয়েছে।

চূড়ান্ত খসড়ায় আরও পরিবর্তন

বিটিআরসির প্রবিধানের আগের খসড়ায় নিষিদ্ধ বার্তার উৎস বা ফার্স্ট অরিজিনেটরকে শনাক্ত করে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। এটি নিয়ে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো আপত্তি তুলেছিল। তারা জানিয়েছিল, তাদের ব্যবহারকারীদের বার্তা এনক্রিপ্টেড অর্থাৎ গোপন থাকে।

সর্বশেষ খসড়ায় বিটিআরসি ধারাটি বাদ দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, আদালতে জমা দেওয়া খসড়ায় বিভিন্ন অংশীজনের সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়েছে।

বিটিআরসি এই প্রবিধানের কার্যকরী বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সময়ে সময়ে নির্দেশনা প্রদান করতে পারবে, এমন একটি নতুন ধারা যোগ করা হয়েছে। এটিও উদ্বেগের কারণ বলে জানিয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইমুম রেজা। তিনি বলেন, মৌলিক অধিকার সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয় শুধু রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের কোনো সংস্থার ওপর ছেড়ে না দিয়ে বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টতাও এখানে রাখা উচিত, যাতে আইনের অপব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি না হয়।

এবারের খসড়ায় ডিজিটাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য প্রশাসনিক জরিমানার বিধানও রাখা হয়েছে।

যা বদলাল

নতুন খসড়ায় আরও কিছু পরিবর্তন এসেছে। যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর জন্য আগে তথ্য ১২০ দিন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা ছিল। সেটা কমিয়ে ৯০ দিন করা হয়েছে।

নতুন খসড়ায় কয়েকটি বিষয় রয়ে গেছে, যা নিয়ে উদ্বেগ ছিল। যেমন নিষিদ্ধ আধেয় নিজ উদ্যোগে সরিয়ে ফেলার বাধ্যবাধকতা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার থেকে আদেশ পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য প্রদান করার বাধ্যবাধকতা এবং বাংলাদেশ–সম্পর্কিত বেআইনি কোনো আধেয় বাংলাদেশের ভেতর থেকে বা দেশের বাইরে থেকে প্রচারিত হলে তা বিটিআরসি থেকে নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে ফেলার বাধ্যবাধকতা।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা

এদিকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান ও পরিচালনা’ বিষয়ে হালনাগাদ খসড়া নীতিমালার অগ্রগতি জানাতে সময়ের আরজি জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের জন্য ২৯ নভেম্বর দিন রেখেছেন।

এর আগে গত ১৩ জুন হাইকোর্ট ওটিটিনির্ভর বিভিন্ন ওয়েব প্ল্যাটফর্মে অনৈতিক-আপত্তিকর ভিডিও আধেয় পরিবেশন রোধ, তদারকি ও রাজস্ব আদায়ে চূড়ান্ত নীতিমালার বিষয়ে পদক্ষেপের অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেন। তিন মাসের মধ্যে বিটিআরসিকে অগ্রগতি জানাতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল বিষয়টি আদালতে ওঠে। আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী তানভীর আহমেদ ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ছিলেন।