দেশের ৫০ শতাংশ গ্যাস উৎপাদন করে বিবিয়ানা। উত্তোলনযোগ্য মজুতের ৯৫ শতাংশ শেষ। তবে নতুন মজুতের সম্ভাবনা দেখছে পেট্রোবাংলা।
দেশে দৈনিক গ্যাস উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি আসে হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে। চাহিদা মেটাতে কখনো কখনো সক্ষমতার চেয়ে বেশি উৎপাদন করেছে গ্যাসক্ষেত্রটি। ইতিমধ্যে এখানকার মোট মজুতের ৯৫ ভাগ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমান উৎপাদনের ধারা ধরে রাখলে বাকি মজুত শেষ হয়ে যাবে এক বছরের মধ্যে। এতে গ্যাস সরবরাহে বড় বিপর্যয় তৈরি হতে পারে।
চলমান গ্যাস-সংকটের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বেশি মজুত থাকা তিনটি গ্যাসক্ষেত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস, সিলেটের কৈলাসটিলা ও হবিগঞ্জের রশিদপুর থেকে কমছে উৎপাদন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ জন্য দায়ী জ্বালানি বিভাগের অবহেলা ও অদক্ষতা। কারিগরি পরিকল্পনা ও দক্ষ প্রযুক্তির অভাবে মজুত থাকার পরও উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। অথচ কম মজুত থাকা বিবিয়ানা থেকে কয়েক গুণ উৎপাদন বাড়িয়ে তা শেষ করা হয়েছে।
বিবিয়ানায় গ্যাসের মজুত শেষ হয়ে আসার তথ্য সঠিক নয়। এ তথ্য সংশোধন করা হবে। এ ছাড়া উৎপাদন যাতে কমে না যায়, সে জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।জনেন্দ্র নাথ সরকার, চেয়ারম্যান, পেট্রোবাংলা
দেশে বর্তমানে ২৮টি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র তিতাস থেকে উৎপাদন করছে সরকারি কোম্পানি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল)। কৈলাসটিলা ও রশিদপুর থেকে উৎপাদন করে আরেক সরকারি কোম্পানি সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড (এসজিএফএল)। আর বিবিয়ানা থেকে উৎপাদন করে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। তিতাস গ্যাসক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মজুত থাকলেও এটি উৎপাদনে পিছিয়ে আছে।
গ্যাসের মজুতের দিক থেকে চতুর্থ হলেও উৎপাদনে শীর্ষে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র। পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্য বলছে, দিনে এ গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে ২৬টি কূপ থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। উৎপাদন বাড়াতে ২০২১ সালে গ্যাস উত্তোলনের পাইপ পরিবর্তন করে বেশি ব্যাসার্ধের পাইপ বসানো হয়েছে।
গত মার্চ পর্যন্ত এ গ্যাসক্ষেত্রে মজুত ছিল ২৫৪ বিসিএফ (বিলিয়ন ঘনফুট)। প্রতি মাসে গড়ে ৩০ বিসিএফ করে তোলা হচ্ছে। এ হিসাবে গত চার মাসে আরও প্রায় ১২০ বিসিএফ তোলা হয়েছে। ফলে অবশিষ্ট মজুত থাকার কথা ১৩০ বিসিএফের কিছু বেশি। বর্তমান ধারায় উৎপাদন করলে চার মাসে মজুত শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তাই এটি থেকে ধীরে ধীরে উৎপাদন কমতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। উৎপাদন কমালেও ২০২৫ সালের মধ্যে মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে। অথচ গত বছরও সক্ষমতার চেয়ে বেশি উৎপাদন করা হয়েছে এই ক্ষেত্র থেকে।
শেভরন বাংলাদেশের মুখপাত্র শেখ জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বর্তমান চাহিদা মেটাতে মজুত ব্যবস্থাপনায় বৈশ্বিক দক্ষতা ব্যবহার করে গ্যাস উৎপাদন করছে শেভরন। উৎপাদনের সম্ভাবনা বাড়াতেও কাজ করছে তারা।
গ্যাসের মজুতের দিক থেকে চতুর্থ হলেও উৎপাদনে শীর্ষে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র। পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্য বলছে, দিনে এ গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
আবিষ্কারের সময় বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের প্রাথমিক মজুত ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৩৮৩ বিসিএফ। উত্তোলনযোগ্য মজুত ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭৫৫ বিসিএফ। এর মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত উৎপাদন করা হয়েছে ৫ হাজার ৫০১ বিসিএফ।
তবে পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, হাইড্রোকার্বন ইউনিটের দেওয়া গ্যাস মজুতের তথ্যটি পুরোনো। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনার চুক্তি ২০৩৪ সাল পর্যন্ত নবায়ন করেছে শেভরন। এর মধ্যে নতুন কূপ খনন করে মজুত বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে তাদের। নতুন করে মজুত যাচাই করছে তারা। কারণ, প্রতিদিন এখনো একই হারে গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে, এতে গ্যাসের চাপ কমছে না। মজুত ফুরিয়ে এলে চাপ কমে যাওয়ার কথা। তবে গ্যাসের বর্তমান মজুত সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি তারা।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বিবিয়ানায় গ্যাসের মজুত শেষ হয়ে আসার তথ্য সঠিক নয়। এ তথ্য সংশোধন করা হবে। এটির মজুত নিয়ে নতুন করে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া উৎপাদন যাতে কমে না যায়, সে জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শেভরনও এটি নিয়ে কাজ করছে।
আজ ৯ আগস্ট জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস। ২০১০ সাল থেকে সরকারিভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবার এ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রত্যয়, জ্বালানির সাশ্রয়। যদিও গ্যাস সাশ্রয়ে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ২০১৮ সালের পর থেকে গ্যাসের উৎপাদন কমছে। ঘাটতি পূরণে এলএনজি আমদানিতে ঝুঁকেছে সরকার।
ভূতত্ত্ববিদ বদরূল ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারেই মজুত ফুরিয়ে আসার তথ্য মিলেছে। এতে গ্যাসের উৎপাদন বড়ভাবে কমে যাবে।
আর এখানে নতুন কূপ খনন করে গ্যাস না পাওয়া গেলে তো কিছু করার থাকবে না। একটি গ্যাসক্ষেত্রের ওপর একক নির্ভরতা তাই ভোগাতে পারে। এর বাইরে দেশের বড় তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন বাড়ানো যেত; কিন্তু তা না করে এলএনজি আনার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।