জ্বালানিসংকটের কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংকট বেড়েছে। এক অটোরিকশায় এভাবেই যেতে হয়েছে যাত্রীদের। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেট মোড় থেকে তোলা
জ্বালানিসংকটের কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংকট বেড়েছে। এক অটোরিকশায় এভাবেই যেতে হয়েছে যাত্রীদের। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেট মোড় থেকে তোলা

চট্টগ্রামে বেশি ভাড়াতেও যানবাহন পাচ্ছেন না যাত্রীরা, সিএনজি স্টেশনের সামনে দীর্ঘ সারি

চট্টগ্রামে আজ রোববার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে ফিলিং স্টেশনে গ্যাসের চাপ আগের চেয়ে বাড়লেও চাহিদা অনুযায়ী সংকট কাটেনি। এতে আজও গণপরিবহন–সংকটের কারণে চাকরিজীবীদের ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে।

আজ সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নগরের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, চাকরিজীবী নারী ও পুরুষেরা গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষায় আছেন। সড়কে যানবাহন ছিল প্রয়োজনের তুলনায় কম। গ্যাসচালিত অটোরিকশা ছিল হাতে গোনা।

মূলত কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ প্রায় ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকায় দেশের পূর্বাঞ্চলে গ্যাস-বিপর্যয় ঘটে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার পর টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আংশিক সরবরাহ শুরু হয়েছে। এ কারণে আজও গ্যাসচালিত যানবাহনের সংকট থেকে গেছে।

সিএনজি স্টেশনের সামনে প্রাইভেট কারের সারি। আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর এলাকা থেকে তোলা

আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মুরাদপুর মোড়ে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আশহাবুর রহমান। আগ্রাবাদ এলাকায় গন্তব্য তাঁর। আশহাবুর প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাননি তিনি। একটি অটোরিকশার চালক বেশি ভাড়া দাবি করায় তিনি সেটিতে ওঠেননি। এ পথে সাধারণত ১০০ থেকে ১২০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু চালক চেয়েছেন ১৮০ টাকা।

কাপড় বিক্রেতা রাকিবুল ইসলামের গন্তব্য ছিল নগরের নিউমার্কেট এলাকা। এই পথের দূরত্ব প্রায় ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার। স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া দিতে হয় ১২০ টাকার মতো। কিন্তু রাকিবুল জানালেন, অটোরিকশাচালকেরা ২০০ টাকা ভাড়া দাবি করছেন। তিনি অবশ্য পরে ১৬০ টাকায় অটোরিকশা ঠিক করেছেন।

সকালে নগরের ২ নম্বর গেট মোড় ও এ কে খান এলাকায় গিয়েও চাকরিজীবীদের ভিড় দেখা যায়। গণপরিবহন–সংকটের কারণে অনেকেই আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করছিলেন। কেউ যানবাহন না পেয়ে বাড়তি ভাড়ায় রিকশায় উঠছিলেন। এ কে খান এলাকায় রওনক ইসলাম নামের এক তরুণ বলেন, তিনি সকাল আটটার দিকে জিইসি এলাকা থেকে তিনটি রিকশায় ভেঙে ভেঙে এ কে খান এলাকায় এসেছেন। এই পথের দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার, খরচ হয়েছে ৩১০ টাকা।

চট্টগ্রাম মেট্রো ট্রান্সপোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নগরে গ্যাসচালিত গণপরিবহনের মধ্যে রয়েছে—অটোরিকশা, হিউম্যান হলার, মিনিবাস ও টেম্পো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে যানবাহনের চালকেরা গ্যাস নিয়েছেন।

ফিলিং স্টেশনে দীর্ঘ সারি

সিএনজি স্টেশনে যানবাহনের সারি। আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর এলাকা থেকে তোলা

সকালে নগরের কদমতলীর ফোর স্টার সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সেখান থেকে গ্যাস নিতে বেশ কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার লাইনে ছিল। তবে গতকাল শনিবারের তুলনায় এ লাইন আজ ছোট হয়েছে। মোহাম্মদ ফারুক নামের এক অটোরিকশাচালক প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু এখনো কয়েক ঘণ্টা লাইনে থাকতে হচ্ছে। মোহাম্মদ হাবিব নামের এক চালক বলেন, তিনি সকাল ৮টায় লাইনে দাঁড়িয়ে ১০টার দিকে গ্যাস পেয়েছেন।

নগরের ষোলোশহর এলাকার ফসিল সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গিয়েও লাইন পাওয়া গেছে। রতন নাথ নামের এক প্রাইভেট কারের চালক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে লাইনে আছেন। গত দুই দিন গ্যাসই পাননি।

যানবাহন না পেয়ে অফিস ও স্কুলগামীদের অপেক্ষায় থাকতে হয়। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেট মোড় থেকে তোলা

চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) চট্টগ্রাম নগর, ৯টি উপজেলা ও রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পেপার মিলে গ্যাস সরবরাহ করে। গ্রাহক সংযোগ আছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি।

কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস পাওয়া গেছে। ফিলিং স্টেশনগুলোয় গ্যাসের চাপ বেড়েছে। তবে চট্টগ্রামের চাহিদা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।