বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠী অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট। জোটের নেতারা বলেছেন, সংখ্যালঘু ও পাহাড়িরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের ওপর প্রতিনিয়ত বিভিন্ন হুমকি আসছে। তাই দেশে গণতন্ত্র ও সহাবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে হবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত এক গণ-সমাবেশে উপস্থিত জোটের নেতারা এসব কথা বলেন। সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেওয়া আট দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে প্রধান বক্তা চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৩ বছর পরও বাঙালি জাতি একটি আদর্শিক ইতিহাস তৈরি করতে পারেনি। এটি আমাদের জন্য লজ্জার এবং ভবিষ্যতের জন্য আতঙ্কের। এর নিরসন হওয়া জরুরি। আমাদের প্রত্যেকের লেজুড়বৃত্তির মানসিকতাই আজকের এ বিপর্যয় নিয়ে এসেছে।’
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা উল্লেখ করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘আপনারা বলেছেন, এ দেশে সহিংসতা হচ্ছে না, রাজনৈতিক নিপীড়ন হচ্ছে। তাহলে দুর্গাপূজায় কেন মাদ্রাসার ছাত্রদের নামিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন? এতেই প্রতীয়মান হয় এ দেশের সংখ্যালঘুরা কতটা অনিরাপদ।’
অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘আমাদের যে হিন্দু উপদেষ্টা হলেন, তিনি আজও কোনো মন্দির পরিদর্শনে যাননি, কোনো ক্ষতিগ্রস্তের পাশে দাঁড়াননি। হিন্দুদের স্বার্থে, সংখ্যালঘুদের স্বার্থে কোনো বক্তব্য দেননি। তাঁর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তাহলে কাকে হিন্দু প্রতিনিধি বানানো হয়েছে?’
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে এই নেতা বলেন, পৃথিবীতে আপনি শান্তির বার্তা দিয়েছেন, শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা যদি নিরাপদ না থাকে, এ শান্তি স্থায়ীভাবে বিপন্ন হবে। এই দেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। রাজনীতি আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হবে। গণতন্ত্র ও সহাবস্থানের জন্য প্রতিটি ধর্মের মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারকে সমুন্নত করতে দৃশ্যমান উদ্যোগ নিন।
আরেক ধর্মীয় নেতা রবিশ্বানন্দ পুরী মহারাজ বলেন, ‘আজকে এমনই এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছি, আজ আমরা শহীদ হচ্ছি বলে, প্রাণ যাচ্ছে বলে, পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে বলে, এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সমগ্র বাংলাদেশের সনাতনী সমাজ এখানে উপস্থিত হয়েছে। আমাদের আট দফা দাবি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অবিলম্বে আট দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ধর্মীয় নেতা গোপীনাথ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ১৯৭১ সালের পর থেকে যে সরকারই এসেছে, প্রত্যেকে সনাতনীদের ওপর নির্যাতন করেছে। কোনো সরকারের আমলেই এসব অত্যাচারের বিচার করা হয়নি।
জোটের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিচারে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ, সংস্কৃতি ও পালি শিক্ষা বোর্ড গঠন এবং দুর্গাপূজায় পাঁচ দিনের ছুটি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ধীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নির্মল বিশ্বাস। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের প্রতিনিধি প্রসেঞ্জিত কুমার হালদার, সনাতনী অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধি সাজেন কৃষ্ণ বল, বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিকের সুশান্ত অধিকারী প্রমুখ।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ ইসকনের সাধারণ সম্পাদক লীলারাজ ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দিপঙ্কর সিকদার, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সভাপতি আশীষ চন্দ্র দাশ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত অধিকারী, বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের মহাসচিব শ্যামল কান্তি নাগসহ আরও অনেকে।