প্রথমা প্রকাশনের আয়োজনে কথাসাহিত্যিকদের বৈঠকে (বাঁ থেকে) রাহিতুল ইসলাম, জাভেদ হুসেন, আনিসুর রহমান, তানজিনা হোসেন, রেজাউর রহমান, হাসনাত আবদুল হাই, হরিশংকর জলদাস, সুমন্ত আসলাম ও আনিসুল হক
প্রথমা প্রকাশনের আয়োজনে কথাসাহিত্যিকদের বৈঠকে (বাঁ থেকে) রাহিতুল ইসলাম, জাভেদ হুসেন, আনিসুর রহমান, তানজিনা হোসেন, রেজাউর রহমান, হাসনাত আবদুল হাই, হরিশংকর জলদাস, সুমন্ত আসলাম ও আনিসুল হক

সমাজ গঠনে গল্প, কবিতা ও উপন্যাসে জোর দিতে হবে

কথাসাহিত্য পাঠক সমাদৃত হলে তবেই মেলে তৃপ্তি। কিন্তু কথাসাহিত্যের পাঠক কমছে। বই বিক্রি হলেও পাঠক তা কতটা পড়ছে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কথাসাহিত্যের চেয়ে বরং এখন ‘নন–ফিকশনে’ পাঠকেরা বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। অথচ সমাজ গঠনে গল্প, কবিতা ও উপন্যাসে জোর দেওয়া জরুরি।

কথাসাহিত্যের নানা দিক নিয়ে এসব কথা উঠে এল কথাসাহিত্যিকদের আলোচনায়। গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘কথাসাহিত্যিকদের বৈঠক’ নামে এ আয়োজন করে প্রথমা প্রকাশন। আড্ডায় কথাসাহিত্যিকেরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন।

আলোচনার বড় অংশজুড়ে ছিল, ‘কথাসাহিত্য কোন দিকে যাচ্ছে?’ কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম বলেন, বিশ্বব্যাপী কথাসাহিত্যের চেয়ে নন–ফিকশন বেশি পড়ছে। হয়তো পাঠকের রুচির সঙ্গে তা বেশি যাচ্ছে। জীবন এখন অনেক দ্রুত হয়ে গেছে। কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল বলেন, বই কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিশুদের আবেগ বুঝে সে অনুযায়ী লেখার পরামর্শ দেন তিনি।

বইয়ের বাজার, প্রচারণা বড় শহরকেন্দ্রিক হয়ে গেছে বলে মনে করেন আরেক সাহিত্যিক শিবব্রত বর্মন। তিনি বলেন, ঢাকায় বইয়ের বিক্রি ও দোকান বাড়ছে। কিন্তু জেলা ও থানা শহরগুলোয় সে চিত্র দেখা যায় না। প্রকাশকেরা সম্মিলিতভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বইয়ের দোকান করতে পারে। বইয়ের প্রচারেও অভিনবত্ব আনার পরামর্শ দেন তিনি।

আরেক সাহিত্যিক সুহান রিজওয়ান জানান, এখনো লেখা কাহিনি ও আখ্যানভিত্তিক হয়। কিন্তু গত ১০–১৫ বছরে পাঠকের রুচি বদলেছে। এখন গ্রাফিক নভেল এসেছে। সেগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে। লেখায় গবেষণা থাকতে হবে এবং পাঠককে বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে।

প্রথমা প্রকাশনের পরামর্শক অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, পয়লা বৈশাখে যেমন শাড়ি কিনতে হয়, তেমনি অনেকেই আছেন, যাঁরা বইমেলাতেও বই কেনেন। কিন্তু দু–চারটি পৃষ্ঠা উল্টে আর পড়েন না। আর যদি কোনো বই আলোচিত হয়, তাহলে একটু পড়ে দেখেন। একসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ পাঠাগার ছিল। এখন আর তা নেই। শিক্ষা-সমাজ এখন পাঠবিমুখ।

আলোচনায় উঠে আসা পরামর্শগুলো খুবই প্রয়োজনীয় বলে জানান প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, পরিকল্পনা করে না এগোলে সংকটে পড়তে হবে। প্রকাশকেরা নানাভাবে প্রচারের কাজ করে যাচ্ছেন। বইয়ের প্রচারে লেখকদেরও ব্যক্তিগত উদ্যোগ আছে বলে তিনি মনে করেন। সমাজ গঠনে সামনে গল্প, কবিতা, উপন্যাসে জোর দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

বৈঠকে সাহিত্যিকেরা নিজেদের লেখার অভিজ্ঞতার কথা জানান। ৫০টির বেশি বই লিখে ফেললেও নিজেকে এখনো কীটতত্ত্ববিদ হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন রেজাউর রহমান। লেখালেখির মাধ্যমে সমাজের ক্ষয়িষ্ণু চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।

কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই তাঁর কল্যাণী/মমতাজ উপন্যাস লেখার নেপথ্য কাহিনি শোনান। জানান, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে এক নারী ভাষাসংগ্রামী নিয়ে ফেসবুকে এক বন্ধুর একটি পোস্ট দেখেন তিনি। এরপর নারায়ণগঞ্জের মর্গান বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বা কল্যাণী রায় নামের সেই সংগ্রামীর খোঁজে নেমে পড়েন। তাঁর নামেই লিখে ফেলেন এ উপন্যাস।

বয়স ৫০ পেরিয়ে কথাসাহিত্যের জগতে এসেছেন বলে জানান হরিশংকর জলদাস। এই কথাসাহিত্যিক বলেন, জীবনের নানান অনুষঙ্গ থেকেই উপন্যাস লিখেছেন।

কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক জানান, লিখতে বা ছবি আঁকতে বসলে জগৎ–সংসারের সব ভুলে যান তিনি। তাঁর লেখা কখনো আমার মাকে উপন্যাসটি দিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার গল্প শোনান আনিসুল হক।

আলোচনায় আরও অংশ নেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক কবি সাজ্জাদ শরিফ, শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন, প্রথমার সমন্বয়ক মেরিনা ইয়াসমিন, সাহিত্যিক ও প্র প্রকাশনের সুমন্ত আসলাম, কথাসাহিত্যিক সাগুফতা শারমীন তানিয়া, তানজিনা হোসেন, হাসনাত শোয়েব, আনিসুর রহমান, রাহিতুল ইসলাম প্রমুখ। বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথমার সমন্বয়ক ও কথাসাহিত্যিক জাভেদ হুসেন।