ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও সেখানে কর্মরত চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় লাশ পোড়ানোর মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার ও ট্রাইব্যুনালের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজ আলাদা একটি মামলা (বিবিধ মামলা) নথিভুক্ত হয়। এ নিয়ে এই ট্রাইব্যুনালে মোট আটটি মামলা হলো।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আজ ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন দাখিল করা হয়েছিল। সাভারের আশুলিয়া এলাকায় গত ৫ আগস্ট ছয় ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাঁদের হত্যা করার পর চ্যাংদোলা করে একটি রিকশার মধ্যে ওঠানো হয়। ওখানে কিছুক্ষণ ফেলে রাখার পর পুলিশের একটি ভ্যান নিয়ে এসে সেখানে ওঠানো হয়। ভ্যানটা সেখান থেকে সরিয়ে থানার কাছে একটি দোকানের সামনে রেখে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল মানুষ যাতে করে বুঝতে না পারে, তাঁদের কে হত্যা করেছে। পুলিশ হত্যা করে পুলিশের গাড়িতে রেখে আগুন দিলে মানুষ মনে করতে পারে, হয়তো এই হত্যাকাণ্ড ছাত্র-জনতা করেছেন। এভাবে দায় এড়ানোর জন্য তাঁরা পুলিশের গাড়িতে রেখে আগুন দেন।’
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত করেছে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তাতে দেখা যায়, সে সময় পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগকে নিয়ে তৎকালীন ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম নিজ হাতে অস্ত্র নিয়ে গুলি করেছেন। এই লাশ পোড়ানোর ঘটনার সঙ্গে তিনিসহ সে সময় কর্মরত চার পুলিশ কর্মকর্তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। আজ এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছিল। তা মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, দ্রুত তাঁদের গ্রেপ্তার করে হাজির করার জন্য। আগামী ২৬ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন যা পাওয়া যাবে, তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে।’
এই চার পুলিশ কর্মকর্তা এ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন বলেও জানান চিফ প্রসিকিউটর। তিনি আরও বলেন, ‘নাম বললে পালিয়ে যেতে পারেন, তাই এই চার কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন মহল, যারা গ্রেপ্তার নিশ্চিত করে, তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে পালিয়ে যাওয়ার আগে গ্রেপ্তারটা সুষ্ঠুভাবে করতে পারে।’
পুলিশের এই চার কর্মকর্তা বিভিন্ন জায়গায় পদায়নরত অবস্থায় আছেন জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, কিন্তু তাঁরা কর্মস্থলে আছেন কি না, তা তিনি জানেন না। তাঁদের এখনো চাকরিচ্যুত করা হয়নি। তিনি আশা করছেন, দ্রুতই তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে যাঁরা বিশেষভাবে জড়িত, তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার পরেই তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন করা হচ্ছে বলেও জানান তাজুল ইসলাম।
শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, বি এম সুলতান মাহমুদ, আবদুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ।