পুলিশ
পুলিশ

জনমত জরিপ

রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ চান বেশির ভাগ মানুষ

রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ চান দেশের বেশির ভাগ মানুষ। তাঁরা সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসানের পক্ষে মত দিয়েছেন।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের করা এক জরিপে এমন জনমত এসেছে। ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক এই জরিপের ফলাফল গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে।

সংস্কারের মাধ্যমে কেমন পুলিশ চান—এমন প্রশ্নের জবাবে সর্বাধিক মতামত পড়েছে দুটি ক্ষেত্রে। প্রথম অবস্থানে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ চাই (৮৮.৭%)। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আইনের প্রতি অনুগত বা নিরপেক্ষ পুলিশ (৮৬.২%)। এ ছাড়া দুর্নীতিমুক্ত পুলিশের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা।

কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার জরুরি—এমন প্রশ্নে ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি বন্ধের পক্ষে মত দেন ৭৭ দশিক ৯ শতাংশ। গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনার পক্ষে মত দেন ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশন এই জনমত জরিপ করার সিদ্ধান্ত নেয় গত ৩১ অক্টোবর। জরিপে অংশ নেন ২৪ হাজার ৪৪২ জন। তাঁদের মধ্যে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষ প্রায় ৮৭ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ছিলেন ২৩ হাজার ১৯১ জন, অর্থাৎ ৯৫ শতাংশ। নারী ছিলেন ১ হাজার ২৫১ জন বা ৫ শতাংশ।

জরিপে উত্তরদাতাদের মধ্যে ১৪টি পেশাভিত্তিক বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৩৬ শতাংশ) ছিলেন চাকরিজীবী। এরপর রয়েছে শিক্ষার্থী ২৭ শতাংশ, ব্যবসায়ী ৭ দশমিক ৬ শতাংশ ও প্রকৌশলী ৭ দশমিক ১ শতাংশ। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অংশ নেয় ঢাকার মানুষ, মোট উত্তরদাতার ২০ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তদন্তে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন সংগঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৬০ শতাংশ মানুষ। হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত স্থায়ী তদন্ত কমিশন গঠনের কথা বলেছেন ২০ শতাংশ। এ ছাড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে ক্ষমতা অর্পণের কথা বলেছেন ২০ শতাংশ মানুষ।

পুলিশকে জবাবদিহির আওতায় আনতে এবং স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাবমুক্ত রাখতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক? এমন প্রশ্নের জবাবে ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, পুলিশের জন্য আলাদা একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা কমিশন গঠন করা যেতে পারে। ৪১ শতাংশ বলেছেন, স্বাধীন ‘পুলিশ ন্যায়পাল’ প্রতিষ্ঠা করতে।

রাজধানীতে সভা-সমাবেশ আয়োজনের আগে পুলিশ কমিশনারের অনুমতি গ্রহণকে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলে মনে করেন প্রায় ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা। ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ মনে করেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অপব্যবহারযোগ্য। এই ধারার যুগোপযোগী সংস্কার চান ৪৬ শতাংশ।

বিক্ষোভ মিছিল মোকাবিলা ও বিরোধী দল দমনে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ফৌজদারি অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের শাস্তির পক্ষে মত দেন ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় পুলিশি হেফাজতে বা রিমান্ডে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ধারাটি সংশোধন ও সংস্কার চান প্রায় ৯২ শতাংশ উত্তরদাতা। তল্লাশির সময় পুলিশ পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে বা বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি করতে চাইলে তার প্রতিকারের একটি কার্যকর কল সার্ভিস চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৭ শতাংশ উত্তরদাতা।

বাংলাদেশ পুলিশ বিভিন্ন ধরনের গণমুখী সেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’। এ সেবায় সন্তুষ্ট কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায় ৫৭ শতাংশ সন্তোষজনক বলেছে। সন্তোষজনক নয় বলেছেন ৩২ শতাংশ। ১১ ভাগ উত্তরদাতা এ বিষয়ে অবগত নন। অনলাইনে ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ সেবাকে সন্তোষজনক জানিয়েছেন ৩২ ভাগ, সন্তোষজনক নয় বলেছেন ৪৫ ভাগ। ২২ ভাগ উত্তরদাতা এ বিষয়ে অবগত নন। ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার’ নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছেন ২৭ ভাগ, সন্তোষজনক নয় জানিয়েছেন ৪২ ভাগ। এই সেবার বিষয়ে অবগত নন ৩১ ভাগ উত্তরদাতা।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) গোলাম রসুল প্রথম আলোকে বলেন, জরিপের ফলাফলে পুলিশের বিদ্যমান আইনের পরিবর্তন এবং আদালতের নির্দেশনাগুলো মেনে চলার বিষয়ে মানুষের প্রত্যাশার কথা উঠে এসেছে। সংস্কারের জন্য যে স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন ও অভিযোগ কমিশনের কথা তাঁরা বলেছেন, মানুষও সেটির পক্ষে মতামত দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘জনবান্ধব পুলিশ গঠনে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা আমাদের চিন্তার সঙ্গে মিলে গেছে। আমরা সুপারিশের ক্ষেত্রে জরিপে আসা জনমতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রাখব।’